করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে মাথা ন্যাড়া করছেন চিকিৎসক নার্সরা!

http://www.dailyjanakantha.com/files/202002/1581679564_08.jpg

অনলাইন ডেস্ক ॥ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রাণকেন্দ্র চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে রেকর্ড প্রাণহানি ও নতুন করে হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। নতুন পদ্ধতিতে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করায় বৃহস্পতিবার আক্রান্তের সংখ্যা গত কয়েক দিনের তুলনায় ১০ গুণ বেড়েছে। নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করায় ভয়াবহ এ সঙ্কটের মাত্রা সম্পর্কে প্রশ্ন উঠছে।

বৃহস্পতিবার চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন বলছে, চীনা ভূখণ্ডেই গত ডিসেম্বর থেকে বুধবার পর্যন্ত করোনায় প্রাণ গেছে এক হাজার ৩৬৭ জনের। তবে এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ প্রাণহানি ঘটেছে বুধবার। ওইদিন দেশটিতে করোনা আক্রান্ত কমপক্ষে ২৫৪ জন মারা গেছেন। নতুন আক্রান্ত ১৫ হাজার ১৫২ জনের মধ্যে করোনা মহামারির প্রাণকেন্দ্র হুবেই প্রদেশেরই ১৪ হাজার ৮৪০ জন বাসিন্দা রয়েছেন। বুধবার চীনে এতসংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন; যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি।

গত দুই সপ্তাহের মধ্যে মঙ্গলবার দেশটিতে সর্বনিম্ন আক্রান্ত এবং মৃত্যুর তথ্য আসার পর বিশ্ববাজারে চাঙ্গাভাব ফিরতে শুরু করেছিল। চীনের জ্যেষ্ঠ মেডিকেল উপদেষ্টা ও সার্স বিশেষজ্ঞ ঝং ন্যানশান আগামী এপ্রিলের মধ্যে এই ভাইরাস শেষ হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন।

হুবেই প্রদেশ কর্তৃপক্ষ করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য শুধু আরএনএ পরীক্ষার ওপর নির্ভরশীল ছিল; যার ফলাফল পেতে কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হয়। দ্রুত করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার জন্য বুধবার থেকে সিটি স্ক্যান শুরু করা হয়। রোগীর শরীরে করোনার উপস্থিতি জানার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুতগতিতে আইসোলেশনে পাঠানো হচ্ছে। ফলে বৃহস্পতিবার হুবেইয়ে ১৪ হাজার ৮৪০ জনকে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।

ভয়াবহ এ বিপর্যয়ের মুখে হিমশিম খাচ্ছেন দেশটির চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। হাসপাতালে টানা ডিউটি পালন করতে গিয়ে অনেক চিকিৎসক ও নার্স অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। রোগীদের দিনরাত সেবা দিতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ায় উহানের অনেক চিকিৎসক, নার্সকে বেইজিংয়ে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে।তাদের ফেরত নেয়ার পর বেইজিং ও দেশটির অন্যান্য শহর থেকে নতুন করে চিকিৎসক এবং নার্স হুবেইয়ে পাঠানো হচ্ছে। বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার সময় যাতে নিজেরা এ ভাইরাসে আক্রান্ত না হন; সেজন্য উহানের চিকিৎসক এবং নার্সরা তাদের চুল ছোট অথবা মাথা ন্যাড়া করে ফেলছেন।এর আগে ১০ দিনের নিরবচ্ছিন্ন লড়াইয়ের পর হঠাৎ হৃদযন্ত্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান সং ইংজি (২৭) নামে এক চিকিৎসক। তীব্র শীতের মধ্যে গত ২৫ জানুয়ারি থেকে একটানা কাজ করার পর ৩ ফেব্রুয়ারি মারা যান তিনি।

সং ইংজি চীনের হুনান শহরের গাড়িচালকদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষায় নিয়োজিত ছিলেন। মহামারি আকারে দেখা দেয়া করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিজের জীবন উৎসর্গের জন্য বীর হিসেবে প্রশংসিত হচ্ছেন তিনি।

অন্যদিকে প্রাণঘাতী এই করোনাভাইরাস সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে আগেই সতর্ক করে দেয়া চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াংও ৬ ফেব্রুয়ারি উহানে মারা যান। রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে গত ১২ জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হন লি। তার শরীরে করোনাভাইরাসের বিষয়টি ধরা পড়ে ১ ফেব্রুয়ারি। রোগীর দেহ থেকে লির শরীরে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।

লি ওয়েনলিয়াং সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, সার্সের মতো মহামারি আকার ধারণ করতে পারে এ নতুন ভাইরাস। তখন তার সে কথায় পাত্তা দেয়নি দেশটির সরকার। পাল্টা তাকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ এনে নীরব থাকার হুমকি দেয়া হয়।

করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে গত ২৫ জানুয়ারি উহানে লিয়াং উডং নামে ৬২ বছর বয়সী এক চিকিৎসকের মৃত্যু হয়।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানের একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিশ্বের ২৪টি দেশে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৬০ হাজার ৩৬৩ জন।

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন বলছে, চীনে এখন পর্যন্ত মোট ৫৯ হাজার ৮০৪ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। শুধু বুধবারই দেশটিতে ১৫ হাজার ১৫২ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। চীনা ভূখণ্ডেই গত ডিসেম্বর থেকে বুধবার পর্যন্ত করোনায় প্রাণ গেছে এক হাজার ৩৬৭ জনের। তবে এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ প্রাণহানি ঘটেছে বুধবার। ওইদিন দেশটিতে করোনা আক্রান্ত কমপক্ষে ২৫৪ জন মারা গেছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভাইরাসের নামকরণ করেছেন কোভিড-১৯ নামে। আরও লাখ লাখ মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।