দগ্ধ শিশুটির চিকিৎসায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মা
by প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গাচুয়াডাঙ্গায় বিদ্যালয় চত্বরে বর্জ্য পোড়ানোর আগুনে পুড়ে ঝলসে গিয়েছিল শিশু সিনথিয়ার (৭) শরীর। কোমর থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত দগদগে পোড়া ঘা নিয়ে দুই মাসের বেশি সময় ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন সে। প্রস্রাব-পায়খানার পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসকেরা দেহে বিকল্প ব্যবস্থা করেছেন।
গত ৫ ডিসেম্বর বেলা ১১ টায় উজলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা শেষে খেলতে গিয়ে আবর্জনার স্তূপের আগুনে পুড়ে অগ্নিদগ্ধ হয় সিনথিয়া। ওই দিন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। পরদিন ৬ ডিসেম্বর ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে।
প্রিয় সন্তান হাসপাতালে যন্ত্রণায় ছটফট করলেও স্নেহের পরশ বুলাতে পারছেন না মা রিনা খাতুন (৩০)। স্বামী তাঁকে ছেড়ে গেছেন। সন্তানকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসার খরচের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অসহায় এই নারী। চিকিৎসায় প্রতিদিন লাগে আট-নয় হাজার টাকা। অর্থাভাবে মেয়ের ঠিকভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছেন না।
রিনা খাতুন সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের উজলপুর বিলপাড়ার মোহাম্মদ আলীর মেয়ে। জীবননগর উপজেলার কেডিকে ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের মাঠপাড়ার ফজর আলী খাঁর সঙ্গে ১৫ বছর আগে বিয়ে হয় রিনা খাতুনের। ঘরে দুই মেয়ে সন্তান। বড় মেয়ে ইভা খাতুন চাঁদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। ছোট মেয়ে সিনথিয়া উজলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী।
রিনা খাতুন জানান, সিনথিয়ার চিকিৎসায় এ পর্যন্ত সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তারা মিলে ৭২ হাজার টাকা এবং শিক্ষকেরা ৬৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। এখন ধার-দেনা করে চিকিৎসা চালাচ্ছেন হতদরিদ্র এই মা। ১০ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গায় আসেন সাহায্য-সহযোগিতার জন্য। প্রথম আলোর এই প্রতিবেদকের সুপারিশে সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আসাদুল হক বিশ্বাস মানবিক সহায়তা হিসেবে গত ১২ ফেব্রুয়ারি ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন রিনা খাতুনের হাতে।
রিনার অভিযোগ, সাত বছর ধরে স্বামী ফজর আলী খোঁজখবর নেন না। ছোট মেয়েটি জন্ম নিলে পরপর দুই মেয়ে হওয়ার অপরাধে তাঁকে তাড়িয়ে দেন। সেই থেকে বাবার বাড়িতে থেকে অনেক কষ্টে খেয়ে না-খেয়ে সন্তানদের লালন-পালন করে আসছিলেন। সন্তানদের জন্য গত বছরের ২০ জুন গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে যান। সেখানে অবস্থানের সময় ৫ ডিসেম্বর ছোট মেয়ের আগুনে পুড়ে যাওয়ার খবর পান এবং ১২ ডিসেম্বর দেশে ফিরে আসেন।
প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গত ৫ ডিসেম্বর সিনথিয়া বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে যায়। ওই দিন বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ময়লা-আবর্জনায় আগুন দেন। খেলতে গিয়ে ওই আবর্জনার আগুনে দগ্ধ হয় সিনথিয়া। চিকিৎসার জন্য প্রথমে দর্শনায়, পরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। শিক্ষকেরা অবহেলা করলেও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম কুমার কুণ্ডু ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান কামালের উদ্যোগে পরদিন ভোরে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় সিনথিয়াকে।
সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ‘হতদরিদ্র পরিবারের শিশুটির চিকিৎসার জন্য ব্যক্তিগত তহবিল থেকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছি। সাহায্য চেয়ে অন্তত ১২ জায়গায় আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু, তেমন সাড়া মেলেনি।’
গত ৭ ডিসেম্বর প্রথম আলোর যশোর-কুষ্টিয়া পাতায় ‘আবর্জনার স্তূপে আগুন, শিশুশিক্ষার্থী দগ্ধ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।