প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ ফুরিয়েছে, এবার ভোটারদের পালা
by নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাজমজমাট প্রচার-গণসংযোগ, ভোটারের দ্বারে দ্বারে প্রার্থীদের বিরামহীন ছোটাছুটি শেষ। দলের প্রার্থীর জন্য কর্মীদের দৌড়ঝাঁপ ফুরিয়েছে। এবার পালা ভোটারদের। শনিবার সকাল আটটা থেকে তাঁরা রাজধানী ঢাকার দুই সিটির পরবর্তী ‘অভিভাবক’ বেছে নেবেন। সকাল আটটা থেকে শুরু হয়ে বিকেল চারটা পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে ইভিএম প্রযুক্তিতে। প্রথমবারের মতো ব্যালটে সিলমারাবিহীন পুরো একটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে। শুক্রবারই কঠোর নিরাপত্তায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ভোটকেন্দ্রগুলোতে মক ভোট অনুষ্ঠিত হয়।
ইতিমধ্যে ভোটের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছেছে ইভিএম ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি। নিরাপত্তাকর্মীরা অবস্থান করছেন কেন্দ্রে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, তিনি কখনো পক্ষপাতমূলক নির্বাচন করেননি, এবারও করবেন না। ইভিএমে কোনোভাবেই কারচুপির সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।
এবারের সিটি নির্বাচনে ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন ৬ জন। কাউন্সিলর পদে ২৫১ জন এবং সংরক্ষিত আসনে ৭৭ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উত্তর সিটিতে ওয়ার্ড রয়েছে ৫৪টি। ঢাকা দক্ষিণে ৭ জন মেয়র পদের জন্য লড়ছেন। কাউন্সিলর পদে ৩৩৫ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী প্রার্থী হয়েছেন ৮২ জন। দক্ষিণে ৭৫টি ওয়ার্ড। ঢাকায় ভোটারসংখ্যা ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৭ জন। ঢাকা উত্তর সিটির ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ৩১৮। এসব কেন্দ্রে ভোটকক্ষের সংখ্যা ভোট কক্ষের সংখ্যা ৭ হাজার ৮৪৬টি। দক্ষিণ সিটিতে ১ হাজার ১৫০টি ভোটকেন্দ্র এবং ভোট কক্ষ রয়েছে ৬ হাজার ৫৮৮টি।
ভোটকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে থাকবে কড়া নিরাপত্তা। যানবাহন চলাচলেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ৩০ জানুয়ারি রাত ১২টা থেকে ২ ফেব্রুয়ারি সকাল ৬টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৩১ জানুয়ারি (শুক্রবার) মধ্যরাত ১২টা থেকে ১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যানবাহন চলাচল সীমিত করা হয়েছে। তবে কিছু যানবাহন চলতে পারবে অনুমতি সাপেক্ষে। জরুরি বাহন এর আওতামুক্ত থাকবে। সদরঘাটে নৌ চলাচলও শুক্রবার রাত ১২টা থেকে ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার থাকবে ভোটের নিরাপত্তায়।
সিটি নির্বাচন এবার নানান দিক থেকে ছিল আলোচিত। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা সমানতালে প্রচার চালিয়েছেন। ব্যাপক ধরনের ধরপাকড়, হামলার অভিযোগ অন্যবারের চেয়ে কম ছিল। বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেনের গণসংযোগে হামলার ঘটনা ছাড়া বিএনপি থেকেও বড় কোনো অভিযোগ ছিল না। দুই দলের কর্মীদের মধ্যেই উৎসবের আমেজ ছিল। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলও বলেছেন, এবারের নির্বাচনে তাঁদের বড় পাওয়া সবাইকে নিয়ে রাস্তায় বের হতে পারা।
প্রধান চার প্রতিদ্বন্দ্বী আতিকুল ইসলাম, তাবিথ আউয়াল, শেখ ফজলে নূর তাপস, ইশরাক হোসেন তাঁদের প্রচারে অকপটে স্বীকার করেছেন, ঢাকার অবস্থা খুব ভালো নয়। তাঁরা ঢাকাকে বাঁচাতে চান। এ ছাড়া গত বছরের ডেঙ্গু রোগের ভয়াবহতা নিয়ে চারজনই কথা বলেছেন। ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে তারা মশা নিধনের কার্যক্রমকে নিজেদের ইশতেহারে প্রাধান্য দিয়েছেন।
ভোটারের রায়েই নগরের অভিভাবক নির্বাচিত হবেন। জয়ের ব্যাপারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বেশ আশাবাদী। তাদের প্রার্থীরা প্রচারেও তা বলে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তাঁর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় নিজের করা এক জরিপের ফল ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানিয়ে বলেছেন, দুই সিটিতেই আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীদের বিপুল জয় হবে।
বিএনপির বলছে, মানুষ ভোট দিতে পারলে তাদের প্রার্থীরাই জয়ী হবেন। তবে তাদের আশঙ্কা গত সংসদ নির্বাচনের মতোই ভোট কারচুপি হবে। এ ছাড়া ইভিএমপদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের ব্যাপারে শুরু থেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে বিএনপি। দলটির আশঙ্কা সরকারদলীয় ব্যক্তিরা ইভিএমের মাধ্যমে ভোট কারচুপি করবেন।
ভোটের প্রচার এবার বেশ জমজমাট ছিল। মাথা ছুঁই ছুঁই করে লাগানো পোস্টারে ছেয়ে আছে পুরো রাজধানী। প্রায় সব প্রার্থীই তাঁদের পোস্টার প্লাস্টিক দিয়ে লাগিয়েছেন। পোস্টারের এমন ব্যবহার নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। এসব পোস্টার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বলেও জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা।
চিরচেনা গানের সুরে প্রার্থী ও প্রতীকের স্তূতি বসিয়ে বানানো নির্বাচনী গান ভোটের প্রচারে অন্য মাত্রা পেয়েছে। ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীবাসীকে এসব গান শুনতে হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেয়র প্রার্থীসহ কাউন্সিলর প্রার্থীরাও সরব ছিলেন নিজেদের প্রচারে। সব মিলিয়ে ঢাকাবাসী এবার তুলনামূলক ভালো নির্বাচনী পরিবেশ পেয়েছে। এখন অপেক্ষার সুষ্ঠু ভোট ও নির্বাচিত অভিভাবকের।
আরও পড়ুন
ইভিএমে ভোট দেবেন যেভাবে