চিলাহাটি-হলদীবাড়ি রেলপথ নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে রেলমন্ত্রী ও ভারতীয় প্রতিনিধি দল

http://www.dailyjanakantha.com/files/202001/1580493352_41.jpg

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ ভারতের হলদীবাড়ির সঙ্গে বাংলাদেশের নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটি সীমান্ত দিয়ে সরাসরি ব্রডগেজ রেল যোগাযোগ স্থাপনে বাংলাদেশে অংশের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেছেন রেলপথ মন্ত্রী এ্যাডঃ নরুল ইসলাম সুজন এমপি। এসময় ভারতীয় প্রতিনিধি দলও পরিদর্শনে আসে।

আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় মন্ত্রী চিলাহাটিতে এসে ওই কাজের পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান এ পর্যন্ত ৫০ ভাগ কাজের অগ্রগতি হয়েছে। এ জন্য সন্তোষ প্রকাশ করেন জানান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই রেলপথের নির্মাণ কাজ শেষ হলে চলতি বছরের জুলাই মাসে ইন্টারচেঞ্জ ব্যবস্থায় রেল যোগাযোগে ঢাকা-মংলা ও খুলনা থেকে কোচবিহারের হলদীবাড়ি ও দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ির এজেপি পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে। ভারতের হলদীবাড়ি সীমান্তের অংশে ৩ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপনের কাজ ভারত শেষ করেছে। এখন আমাদের অংশের কাজ চলছে।

ভারত বাংলাদেশের সরকার ন্যায় এখন জনগন টু জনগন স¤র্পক ঘনিষ্ঠ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন রেলপথ মন্ত্রী এ্যাড. নূরুল ইসলাম সুজন এমপি।

মন্ত্রী জানান আন্তর্জাতিক ভাবে রেল যোগাযোগের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারা বাংলাদেশে রেলপথের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিশ্বমানের করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এতে প্রথম যাত্রীসেবার মান বাড়ানোসহ রেলপথের উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী জানান সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের সঙ্গে রেলপথ নির্মানের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ২০২২ সালে কক্সবাজারে ট্রেন চলবে। এ ছাড়া দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মংলার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য খুলনা থেকে মংলা পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপনের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। আগামী ২০২২ সালে প্রকল্প মেয়াদের মধ্যেই কাজ শেষে ওই বছরেই মংলা-খুলনা রেল চালু হবে।

তিনি বলেন, এই রেল পথ দিয়ে যাত্রী পরিবহনসহ মংলা বন্দরের মালামাল পরিবহন করা হবে। এছাড়া মংলা-খুলনা ও নীলফামারীর চিলাহাটি হয়ে ভারতের হলদীবাড়ি হয়ে শিলিগুড়ির সঙ্গে এই রেল যোগাযোগ সরাসরি সংযুক্ত হবে। এই রেলপথ চালু হলে চতুর্দেশীয় বাণিজ্যেরও একটি বড় পথ খুলে যাবে। বর্তমানে এই রেলপথ চালুর অপেক্ষায় দিন গুনছে ভারত, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের আমদানি ও রফতানিকারনরা। ব্যবসায়ীরা সড়ক পথের চেয়ে রেলপথকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

পরিদর্শনকালে রেলমন্ত্রী চিলাহাটী-হলদিবাড়ী নো ম্যানস ল্যান্ড ৭৮২/১-এস পিলার চত্বরে ভারতীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে রেললাইন স্থাপনে খুটিনাটি নিয়ে আলোচনা করেন। এসময় ভারতীয় প্রতিনিধি দলের মধ্যে ছিলেন ভারতের পূর্বাঞ্চল রেলের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার দে, প্রকল্প প্রকৌশলী তপন দাস, ভারতের ৬৫ ব্যাটালিয়ন বিএসএফ (রাধাবাড়ি জলপাইকুড়ি ক্যাম্প) এর সেকেন্ড ইন কমান্ড জগদিস দাওয়াই।

বাংলাদেশের অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমান, নীলফামারী ব্যাটালিয়ন (৫৬ বিজিবি) এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোঃ মামুনুল হক, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী আলফাত্তা মোহম্মদ মাসুদুর রহমান, বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (পাকশী) আসাদুল হক, প্রকল্প পরিচালক বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগীয় প্রকৌশলী (পাকশী) আব্দুর রহিম, ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মমর্তা শাহিনা শবনম, নীলফামারী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ, ডোমার উপজেলার চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ, ডোমার উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি খাইরুল আলম বাবুল প্রমুখ।

উল্লেখ যে, চিলাহাটি-হলদিবড়ি রুটটি চালু হলে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে যাত্রী পরিবহনে এটি হবে আন্তর্জাতিকভাবে তৃতীয় রেলপথ। বিগত সময়ে কলকাতা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ভেতর ঢুকে খানিকটা পথ অতিক্রম করার পরে আবার ভারতে প্রবেশ করত। এছাড়া নীলফামারীর চিলাহাটি থেকে প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে ভারতের হলদিবাড়ি হয়ে নিউজলপাইগুড়ি পর্যন্ত চলাচল করত পার্সপোট ট্রেন। কিন্তু ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তুলে ফেলা হয়েছিল রেলপথটি। ৫৫ বছর পরে সেই পথ আবার চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারত। বর্তমানে ঢাকা কলকাতা, খুলনা কলকাতা যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে। চিলাহাটি-হলদিবড়ি রুটটি চালু হলে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে যাত্রী পরিবহনে এটি হবে আন্তর্জাতিকভাবে তৃতীয় রেলপথ। বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগিতায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া পুরানো সীমান্ত রেলওয়ে সংযোগ পুনরায় চালুর উদ্যোগে ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা ভারত সফরের সময় এই রেলপথের বিষয়ে একটি চুক্তি হয়।

গত বছরের (২০১৯) ২১ সেপ্টেম্বর রেলপথ মন্ত্রী এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন এমপি, চিলাহাটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই রেলপথের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছিলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাংলাদেশস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাস।

সংশ্লিষ্ট সুত্র মতে এই কাজের প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০ কোটি ১৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। যা প্যাকেজ মূল্যে প্রকল্পটির কাজ চলছে ৬৮ কোটি ৮২ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। চিলাহাটি থেকে হলদীবাড়ী সীমান্ত পর্যন্ত বাংলাদেশ অংশে ৬ দশমিক ৭২৪ কিলোমিটার এবং ২ দশমিক ৬৩৬ কিলোমিটার লুপ লাইনসহ মোট ৯ দশমিক ৩৬০ কিলোমিটার রেলপথ ও ৭টি ব্রিজ নির্মাণের কাজ ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই শেষ করা হবে। এরপর বসানো হবে ব্রডগেজ লাইন। ইতোমধ্যে লাইনগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করে চিলাহাটিতে নিয়ে আসা হয়েছে।

নির্মাণ কাজের প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ রোকনুজ্জামান শিহাব জানান, আমরা নির্ধারিত সময়ের আগেই এই কাজ সমাপ্ত করতে সক্ষম হবো।

প্রকাশ থাকে যে বাংলাদেশের পর্যটক বর্তমানে স্থলপথের বাংলাবান্ধা-হিলি কিংবা বুড়িমারী দিয়ে ভারত-নেপাল-ভুটানে যায়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিসি) ভারতের কলকাতা ও আগরতলা, বুড়িমারী ও বাংলাবান্ধা পর্যন্ত স্থলপথে বাস সংযোগ চালু করেছে। আকাশপথে ভারতের কলকাতা মুম্বাই-চেন্নাই-ব্যাঙ্গালুর ফ্লাইট চালু আছে। যাত্রীরা সাধারনত রেলভ্রমনে বেশী গুরুত্ব দিয়ে থাকে। রেলপথে ঢাকা ও খুলনা থেকে কলকাতার সরাসরি সংযোগ আছে রেলের। চিলাহাটি-হলদীবাড়ি ইন্টারেচঞ্জ লিংক চালু হলে বন্ধুপ্রতীম দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় উন্নয়নের দুয়ার খুলে যাবে। এতে লাভবান হবে উভয় দেশ। প্রজন্মের মধ্যে সম্প্রীতির মেলবন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে।