সিটি নির্বাচন: নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় ঢাকা
by নুরুজ্জামান লাবু ও শেখ জাহাঙ্গীর আলমরাত পোহালেই ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন। এ উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। রাজধানীতে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ভোটের আগের রাতে কোথাও কেউ যাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সেজন্য পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নজরদারি করছেন। পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি মাঠে রয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির সদস্যরাও। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে– পুলিশের সোয়াট দল, র্যাবের কমান্ডো সদস্য, দুই সংস্থারই বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ডগ স্কোয়াডসহ আর্মাড কার।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠানের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। রাজধানীর মূল সড়কসহ প্রায় প্রতিটি অলিগলিতে চেকপোস্ট স্থাপনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পেট্রোলিং করছেন। একদিন আগেই এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান-র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ বলেছেন, ‘নগরবাসী যাতে নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পারেন এবং যাকে ইচ্ছা ভীতিমুক্ত পরিবেশে ভোট দিতে পারেন সেজন্য আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। আমরা রাত-দিন ২৪ ঘণ্টাই মনিটরিংয়ে রাখবো। যেসব নির্বাচনি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ, সেদিকে আমাদের দৃষ্টি রয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অপকর্মের দুঃসাহস কেউ দেখাবেন না। আমরা এটা প্রত্যাশা করি না। যদি করেন, তবে অবশ্যই ইলেক্টোরাল ল’ এবং প্রচলিত আইন অনুযায়ী আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেবো।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন ঘিরে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। একমাস ধরে ঢাকায় নিরবচ্ছিন্নভাবে নির্বাচনি প্রচারণা চলছে। একটি-দুটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কোনও নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়নি। আমরা প্রত্যাশা করছি, যেসব রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তাদের প্রার্থীরা যদি সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখেন, তাহলে আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে কথা দিতে পারি, প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তার জন্য ডিএমপি প্রস্তুত।’
ডিএমপির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন উপলক্ষে এক হাজার ২৮২টি ভেন্যুতে মোট দুই হাজার ৪৬৮টি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। পুরো শহরের পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রগুলোকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কেউ যাতে আগেই ভোটকেন্দ্র দখল বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে উপ-পরিদর্শকের নেতৃত্বে চার-পাঁচ জন কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করবেন। পরিদর্শক থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পেট্রোল ডিউটির মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য কাজ করবেন। ঢাকায় ডিএমপির পক্ষ থেকে বিশ হাজারেরও অধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ১০ হাজার ২৩৮ জন পুলিশ রাখা হয়েছে। কোথাও কোনও ঝামেলা হলেই স্ট্রাইকিং ফোর্স দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনবে।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর প্রতিটি থানায় এলাকার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক নজরদারি করছেন। গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে চেকপোস্ট স্থাপন, তল্লাশি, ফুট ও ভেহিক্যাল পেট্রোলিং বাড়ানো হয়েছে। সন্দেহভাজন যে কাউকে তল্লাশি করা হচ্ছে। অকারণ জটলা দেখলেই পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা তা মনিটরিং করছে।
পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ করার জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। আমাদের ওয়ার্ডভিত্তিক মোবাইল টিমসহ প্রত্যেক থানায় তিনটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকছে। ভোটকেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ ও আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও থাকছেন। প্রতিটি কেন্দ্রে আমরা ঊর্ধ্বতনরাও সশরীরে গিয়ে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করছি।’
ঢাকার প্রবেশপথে সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
এ নির্বাচন উপলক্ষে ঢাকার সবগুলো প্রবেশপথে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সরেজমিন রাজধানীর উত্তরা আব্দুল্লাহপুর, গাবতলী, সায়েদাবাদসহ রেল ও লঞ্চ টার্মিনালগুলোতেও নজরদারি করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচন উপলক্ষে ঝামেলা সৃষ্টি করতে বহিরাগতদের ঠেকাতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভোটার ছাড়া অন্য কারও নির্বাচনি কেন্দ্রগুলোর আশেপাশে অবস্থান নিতেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।’
ডিএমপি কমিশনার শুক্রবার বিকালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বহিরাগত কেউ যাতে ভোট কেন্দ্রের পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে সেজন্য আমরা সতর্ক রয়েছি। গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। ঢাকার প্রবেশপথগুলোতেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি।’ তিনি ভোটকেন্দ্রে ভোটার ছাড়া অন্যদের আসতেও নিরুৎসাহিত করেছেন।
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে মোটরসাইকেল
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন দেখা গেছে, নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই মোটরসাইকেল চলছে। নির্বাচন কমিশনের আদেশ অনুযায়ী, ৩০ জানুয়ারি রাত ১২টা থেকে রাজধানীতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষেধ করা হয়। একমাত্র নির্বাচন কমিশন থেকে সরবরাহ করা স্টিকারযুক্ত মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবে। তবে সরেজমিন স্টিকার ছাড়া মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেখা গেছে।
পুলিশ কর্মকর্তা মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের আগে প্রচার ও মোটরসাইকেলের মুভমেন্ট বন্ধের যেসব বিধিনিষেধ রয়েছে তা আমরা দেখভাল করছি। চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার হওয়ায় এমনিতেই সড়কে যানবাহনের চাপ কম থাকে। নির্বাচন উপলক্ষে অন্যান্য শুক্রবারের তুলনায় সড়কে যানবাহন কম দেখা গেছে। তবে শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) রাত ১২টা থেকে ১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাস, বেবিট্যাক্সি/অটোরিকশা, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, ট্রাক, টেম্পোসহ সব ধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।