যুক্তরাষ্ট্রে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে আক্রান্ত দেড় কোটি
by বিদেশ ডেস্কযুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়াচ্ছে একটি প্রাণঘাতী ভাইরাস। নীরবে প্রাণ হরণ করছে ইনফ্লুয়েঞ্জা গোত্রের ওই ভাইরাসটি। এরই মধ্যে ওই ভাইরাসে দেড় কোটি মার্কিন নাগরিক আক্রান্ত হয়েছে। এ ফ্লু মৌসুমেই ওই রোগে মারা গেছে ৮ হাজার ২০০ জনেরও বেশি। অবশ্য এটা নতুন কোনও মহামারি নয়, এটি সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা। করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী আতঙ্কের মধ্যে এই খবর প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস আশঙ্কা করছে, ২০১৯-২০ ফ্লু মৌসুম (শরৎ ও শীতকাল) যুক্তরাষ্ট্রে এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হতে পারে। সংস্থাটির হিসাবে, এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ ফ্লু-জনিত জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ সংখ্যা দ্রুতই আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা তাদের।
টেম্পল ইউনিভার্সিটির লুইস কাৎজ স্কুল অব মেডিসিনের ফ্যামিলি অ্যান্ড কমিউনিটি মেডিসিনের চেয়ারম্যান ডা. মার্গোট স্যাভয় বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ফ্লু একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। বেশি পরিচিত হওয়ার কারণেই এ রোগে ক্রমেই প্রাণঘাতী হয়ে ওঠার চরিত্রটি সবার দৃষ্টি এড়িয়ে যাচ্ছে। শীতকালেই আমরা বেশি ভাইরাসজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়ি। এ কারণে একটি প্রবণতা দেখা যায় যে, আমরা সব সমস্যাকেই সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা বলে ভেবে থাকি। ইনফ্লুয়েঞ্জা যে কতোটা মারাত্মক হতে পারে সেটি আমরা ভুলে যাই। ’
স্যাভয় বলেন, একেবারে কম করে ধরলেও প্রতি বছর ইনফ্লুয়েঞ্জায় মৃত্যু বাড়ছে। সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোলের (সিডিসি) পূর্বাভাস অনুযায়ী, অদূর ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে শুধু ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর গড়ে কমপক্ষে ১২ হাজার মানুষ মরবে। গত ২০১৭-১৮ ফ্লু মৌসুমে প্রায় ৬১ হাজার মানুষ মারা গেছে, আক্রান্ত হয়েছে ৪ কোটি ৫০ লাখ। বর্তমান ২০১৯-২০ মৌসুমে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষ ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ৮ হাজার ২০০ জন। এর মধ্যে কমপক্ষে ৫৪টি শিশু।
সিডিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, টানা ১১ সপ্তাহ ধরে ফ্লু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। সামনে আরও কয়েক সপ্তাহ এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে।
ডা. স্যাভয় বলেন, চীনের নতুন করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক যুক্তরাষ্ট্রের এই ফ্লুর ভয়াবহতাকে দৃষ্টির আড়াতে নিয়ে যেতে পারে। মানুষ ফ্লু নিয়ে ভয় পায় না কারণ স্বাস্থ্য সেবাদাতারা সবসময় এটিকে ‘নিয়ন্ত্রণে আছে’ বলে দেখান।
ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটার মেডিকেল স্কুলের শিশুরোগ বিভাগের অতিরিক্ত সহকারী অধ্যাপক ডা. নাথান চমিলো ফ্লু কীভাবে প্রাণঘাতী হতে পারে তার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, সাধারণ রোগ হওয়ার কারণে ফ্লুর ভয়াবহতাকে ছোট করে দেখা হয়। তবে এ রোগটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত। ফ্লু যখন মারাত্মক আকার ধারণ করে তখন এটি কিন্তু আর সাধারণ অসুস্থতা থাকে না। ভালোমতো ফ্লু হলে মারাত্মক কিছু ঘটে যেতে পারে।
সিডিসি বলছে, বর্তমান ফ্লু মৌসুমে ভাইরাসের মধ্যে অ্যান্টিজেনিক শিফটের কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তবে এর আগে এটি ঘটেছে। বিশেষ করে ২০০৯ সালে এইচ১এন১ ভাইরাসের ক্ষেত্রে এটি হয়েছিল। এর বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা না থাকার কারণে ওই সময় মহামারি আকার ধারণ করেছিল।