উবার-লিফট
চরম বিপাকে চালকেরা
by রহমান মাহবুবদেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে নিউইয়র্কের উবার-লিফট চালকদের। নগর জীবনের প্রয়োজনীয় ব্যয় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন অ্যাপভিত্তিক ক্যাব চালকেরা। নতুন নতুন নীতি নির্ধারণ ও সে অনুযায়ী আইন প্রয়োগ করেও সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হচ্ছে নগর ও তদারকি সংস্থাগুলো। দিনে দিনে পরিস্থিতি চলে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এতে পেশাজীবী ক্যাব চালকেরা বঞ্চিত হচ্ছেন।
উবার ও লিফটের মতো অ্যাপভিত্তিক প্ল্যাটফর্মগুলোর কারণে নিউইয়র্ক নগরীর ক্যাবশিল্প ধ্বংসের মুখে। ভালো নেই উবার ও লিফট চালকেরাও। উদ্ভূত পরিস্থিতিকে চালকদের জন্য একটা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার নানা চেষ্টা চলছে। এ লক্ষ্যে ক্যালিফোর্নিয়া ও নিউইয়র্কে নানা আইন করা হয়েছে এরই
মধ্যে। সম্প্রতি চালকদের মধ্যে সুষম ভাড়া বণ্টনের লক্ষ্যে ‘ক্রুজ ক্যাপ’ চালু করেছে নিউইয়র্ক টিএলসি। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
ঘুরেফিরে উবার ও লিফটের মতো কোম্পানির হাতেই রয়ে যাচ্ছে অ্যাপভিত্তিক ক্যাব চালকদের ভাগ্যের নিয়ন্ত্রণ। ক্রুজ ক্যাপ চালুর উদ্দেশ্য ছিল ইউটিলাইজেশন রেটের মাধ্যমে চালকেরা যাতে নগরীর জীবনমানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবিকা উপার্জন করতে পারে। কিন্তু এর প্রতিক্রিয়ায় কোম্পানিগুলো চালকদের কাজের সময় সীমিত করে দিয়েছে। কোম্পানিগুলো আইনের চোখে কোনোভাবে বেঁচে যাবে—এমন ন্যূনতম ভাড়া আয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাপগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে নির্ধারিত সময় চালানোর পর চালকদের অ্যাকাউন্ট অকেজো করে দিচ্ছে কোম্পানিগুলো।
এ বিষয়ে ব্রঙ্কসের উবার চালক মামুন আহমেদ বলেন, ‘আমি গত সপ্তাহে উবার সদর দপ্তরে ফোন দিয়ে বলেছি যে, আমাকে ১৭ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে দেওয়া হয় না। নিউইয়র্কে আমার পরিবার চালাতে ব্যয় প্রতি মাসে ৪ হাজার ডলার। ১৭ ঘণ্টা কাজ করে এর অর্ধেকও আয় হয় না। এ অবস্থায় গলায় দড়ি দিয়ে মরা ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। বিষয়টি জানানোর পর উবার কর্তৃপক্ষ আমার বিষয়টি নোট করে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে।’
চালকেরা যতই মানবেতর অবস্থার মধ্যে থেকে কাজ করুক না কেন, তা নিয়ে কোম্পানিগুলোর কোনো মাথা ব্যথা নেই। একই সঙ্গে কোম্পানিগুলো নগর কর্তৃপক্ষের আইন মেনে চলারও প্রয়োজন বোধ করছে না। আইনকে পাশ কাটালেও কোম্পানিগুলোর সঙ্গে নগর প্রশাসনের সম্পর্ক বেশ ভালো। ফলে পুরো ঘটনার একমাত্র ভুক্তভোগীতে পরিণত হয়েছে চালকেরা।
অ্যাপভিত্তিক গাড়ি চালকেরা মনে করেন, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর হাতে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষমতা রয়েছে বলেই তাঁরা নির্যাতিত হচ্ছেন। ক্ষমতার কিছুটা হলেও চালকদের হাতে ফিরিয়ে দিলে অবস্থার উন্নতি হবে। এ ক্ষেত্রে নগর প্রশাসন কঠোর ভূমিকা নিলে সুফল আসতে পারে।
চালকেরা চান নিজেদের অধিকার ফিরে পেতে। ইচ্ছামতো নিজের কাজের সময় ঠিক করা, কখন কাজ শুরু করবেন কত সময় করবেন, নিজে কাজের শিফট কখন হবে—এ সবকিছু নিজেরাই ঠিক করতে চান তাঁরা। তাঁরা চান নিজের বস নিজেই হতে। উবারসহ অ্যাপভিত্তিক গাড়ি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও শুরুতে এমন প্রতিশ্রুতিই দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। চালকেরা চান কোম্পানিগুলোর দেওয়া প্রতিশ্রুতি যেন তারা পূরণ করে, সে জন্য প্রশাসন কঠোর হোক। প্রচলিত আইনেই তা সম্ভব বলে মনে করেন তাঁরা। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে বাধ্য করতে চালকেরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। নিজেদের দাবি আদায়ে আইনের আশ্রয় নেওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। ভুক্তভোগী ক্যাব চালক ও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে আইনি সহায়তা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।