চীনে বাণিজ্য-ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিপক্ষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

http://www.dailyjanakantha.com/files/202001/1580475433_10.jpg

অনলাইন ডেস্ক ॥ চীনে করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া মোকাবিলায় বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।সম্প্রতি জেনেভায় এক জরুরি বৈঠক শেষে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সংস্থাটি জোর দিয়েছে বলেছে যে, তারা চীনের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার বিপক্ষে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস অ্যাধানম গেব্রিয়েসাস বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে, চীন শেষ পর্যন্ত এই মহামারীকে পরাজিত করতে পারবে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, এই রোগের বিরুদ্ধে চীন যেভাবে লড়াই করছে সেজন্য তাদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করা উচিত এবং তারা সম্মান পাওয়ার দাবি রাখে। একই সঙ্গে এটা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।

বৃহস্পতিবার জরুরি রুদ্ধদার বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, চীনের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার বিপক্ষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

ওই সংবাদ সম্মেলনে করোনাভাইরাসকে একটি ‘অভূতপূর্ব প্রাদুর্ভাব’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। গেব্রিয়েসাস বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ব্যক্তিগতভাবেই এই ভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কাজ করার আদেশ দিয়েছেন এবং এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।

তিনি বলেন, এই ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে চীন যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে তাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিশ্বের নজর কেড়েছে তারা। সে কারণে এই মুহূর্তে চীনের প্রতি বিশ্বের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ কী?

এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শুরুতে জ্বর ও শুষ্ক কাশি হতে পারে। এর সপ্তাহখানেক পর শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়। অনেক সময় নিউমোনিয়াও হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা লাগে। তবে এসব লক্ষণ মূলত রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই জানা গেছে।

সেক্ষেত্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার একদম প্রাথমিক লক্ষণ কী বা আদৌ তা বোঝা যায় কি-না তা এখনও অজানা। তবে নতুন এই করোনাভাইরাস যথেষ্ট বিপজ্জনক। সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের লক্ষণ থেকে এটি মৃত্যুর দুয়ার পর্যন্তও নিয়ে যেতে পারে।

এদিকে, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে চীনের মূল ভূখণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১৩ জনে। এছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

হুবেই প্রদেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার আরও ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার ফলে ভাইরাসটির কেন্দ্রস্থল উহান শহরে মৃতের সংখ্যা ২০৪ জনে দাঁড়িয়েছে। গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২০টির মতো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই প্রাণঘাতী ভাইরাস।

এ পর্যন্ত চীন, থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, হংকং, সিঙ্গাপুর, ভারত, মালয়েশিয়া, নেপাল, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং তাইওয়ানে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া ইসরায়েলেও এক রোগীর শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে আরও একটি হাসপাতালের কাজ প্রায় শেষে দিকে। করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় আগেই হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিল চীন। সে অনুযায়ী ইতোমধ্যেই একটি হাসপাতাল তৈরির কাজ শেষ হয়েছে এবং সেখানকার কার্যক্রমও শুরু হয়ে গেছে। সেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সেবা দেওয়া হচ্ছে।

দ্বিতীয় হাসপাতাল নির্মাণের কাজও প্রায় শেষ বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। আগামী সপ্তাহ থেকেই সেখানে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। লেইশেনসান হাসপাতাল নির্মাণে শ্রমিকরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ওই হাসপাতালের কাজ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।