https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/1600x0x0/uploads/media/2020/01/31/330e4f1e9feda5772b42200e0afed435-5e33e1d72af28.jpg
ল্যাবরেটরিতে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরিতে ব্যস্ত বিজ্ঞানী। ছবি: বিবিসি

করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরির উদ্যোগ

by

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু নতুন এই ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক নেই। এর আগেও অনেকবার এ রকম পরিস্থিতিতে পড়েছে বিশ্ব। শুধু গত পাঁচ বছরেই বিশ্বে ইবোলা, জিকা, মার্স (মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামের ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। এখন ‘২০১৯-এনকভ’ নামের এই ভাইরাসের সংক্রমণ-শঙ্কায় সারা বিশ্ব। এরই মধ্যে এই ভাইরাসে চীনে হাজার হাজার মানুষ সংক্রমিত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ১৭০ জনের বেশি মানুষের।

আগের রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাগুলোতে সঙ্গে যদি তুলনা করা হয়, তাহলে দেখা যায় যে সেসব ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরি করতে বিজ্ঞানীদের কয়েক বছর লেগে গিয়েছিল। কিন্তু চীনের কর্তৃপক্ষ এবার খুব দ্রুত এই ভাইরাসের জেনেটিক কোড জানিয়ে দেয়। ফলে বিজ্ঞানীরা সহজে একটি ধারণা তৈরি করতে পেরেছেন যে ভাইরাসটি কোথা থেকে এসেছে। ভাইরাসটির প্রকোপ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং মানুষকে রক্ষা যায়, তা নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা।

প্রতিষেধক তৈরির দ্রুত উদ্যোগ

সানডিয়াগো ইনোভিয়োস ল্যাবরেটরিতে করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য প্রতিষেধক তৈরির উদ্দেশ্যে বিজ্ঞানীরা অপেক্ষাকৃত নতুন ধরনের ডিএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। প্রতিষেধকটিকে এখন পর্যন্ত বলা হচ্ছে ‘আইএনও-৪৮০০’। সামনের গ্রীষ্মে এটি মানুষের মধ্যে পরীক্ষা করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইনোভিওর গবেষণা বিভাগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কেট ব্রোডেরিক বলেন, ‘চীন এই ভাইরাসের ডিএনএ সিকোয়েন্স জানানোর পর আমরা ল্যাবের কম্পিউটারে তা প্রবেশ করাই এবং তিন ঘণ্টার মধ্যেই একটি প্রতিষেধক ডিজাইন করি।’

 ইনোভিও বলছে, প্রাথমিক পর্যায়ে মানুষের দেহে চালানো পরীক্ষাগুলো যদি সফল হয়, তাহলে আরও বড় পরিসরে পরীক্ষা চালানো হবে। আর ওই পরীক্ষা এ বছরের শেষভাগে চীনের ভাইরাস আক্রান্ত এলাকায় পরিচালনার পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি। ইনোভিওর পরিকল্পনা যদি সফল হয়, তাহলে দ্রুতবেগে সফলভাবে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরির একটি নজির স্থাপন হবে।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণা

করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরিতে আরও দুটি সংস্থা কাজ করছে। একটি ‘মলিকিউলার ক্ল্যাম্প’, প্রতিষেধক তৈরির উদ্দেশ্যে এই সংস্থা কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালার্জি ও সংক্রামক রোগবিষয়ক জাতীয় সংস্থার সঙ্গে ম্যাসাচুসেটসের মডার্না ইনকরপোরেশন যুক্ত হয়ে প্রতিষেধক তৈরির উদ্দেশ্যে গবেষণা করছে। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন এই প্রতিষেধক তৈরিতে বৈশ্বিক প্রয়াসের সমন্বয় করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি প্রোগ্রাম বিভাগের আনা মারিয়া হেনাও-রেস্টরেপো বলেন, ‘আমরা একটি কাঠামো তৈরি করেছি, যার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কাদের তৈরি করা প্রতিষেধক সবার আগে ব্যবহার করা হবে।’

নতুন করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরির প্রচেষ্টা বেশ জোরেশোরে চললেও গবেষণা এখনো একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এ ধরনের রোগের প্রতিষেধক তৈরির জন্য ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বেশ সময়সাপেক্ষ এবং সবচেয়ে কার্যকরভাবে চালানো সম্ভব হয়, যখন রোগটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে ওই সময়ে। বর্তমানে গবেষণাগারগুলোতে তৈরি করা প্রতিষেধকগুলো শেষ পর্যন্ত চীনে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।