এফজিএমও-এর আওতায় আসছে ১০ বিদ্যুৎকেন্দ্র
by সঞ্চিতা সীতুজাতীয় গ্রিডের সুরক্ষায় সঞ্চালন লাইনে ফ্রি গভর্নিং মুড অব অপারেশন (এফজিএমও)-এর আওতায় আসছে ১০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। সম্প্রতি এই লক্ষ্যে ১০টি কেন্দ্র চিহ্নিত করে এফজিএমওভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। ছয় মাসের মধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এই কেন্দ্রগুলোয় এফজিএমও পদ্ধতি বাস্তবায়নে কাজ করবে।
এফজিএমও পদ্ধতিতে প্রতি ১৫ মিনিট পরপর বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদনের একটি স্বয়ংক্রিয় পর্যালোচনা করা হয়। এই পদ্ধতিতে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা যায়। এর ফলে সারাদেশে বিদ্যুৎ একসঙ্গে চলে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা ঘটে না।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জাতীয় গ্রিডের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এফজিএমও পদ্ধতি আনা হচ্ছে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা আমাদের গ্রিডের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চাই। আগে কোনও একটি কেন্দ্রে সমস্যা হলে দেশে ব্ল্যাক আউটের মতো ঘটনাও ঘটেছে। সেই পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, সেজন্যই এই পদ্ধতি আনা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আপাতত ১০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে এফজিএমও পদ্ধতি করতে বলা হয়েছে।কিন্তু পরবর্তী সময়ে আরও বিদ্যুৎকেন্দ্রে এই পদ্ধতি চালু করা হবে।’
বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এফজিএমও বাস্তবায়ন করতে পারলে সঞ্চালন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে।এতে করে এক জায়গায় অর্থাৎ এনএলডিসিতে বসেই বিদ্যুতের সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।এখন সব ক্ষেত্রে যা সম্ভব হয় না।
পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘বর্তমানে সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণের অনেক কাজই ম্যানুয়ালি অর্থাৎ মানুষের মাধ্যমে করা হয়। এফজিএমও করলে পুরো প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় ভাবে চলবে।এফজিএমওতে বিদ্যুৎ সঞ্চালনে একটি নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সি থাকবে। যা হবে ৪৯ দশমিক শূন্য থেকে ৫০ দশমিক পাঁচ হার্জের মধ্যে। ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার (এনএলডিসি) প্রতিদিনের জন্য একটি চাহিদা নির্ধারণ করবে। সেই চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনও হবে। প্রতি ১৫ মিনিট পরপর এই চাহিদা ও উৎপাদনের একটি স্বয়ংক্রিয় পর্যালোচনা হবে। এই পদ্ধতিতে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা যাবে। এর ফলে সারাদেশে বিদ্যুৎ একসঙ্গে চলে যাওয়া বা ব্ল্যাক আউটের মতো ঘটনা ঘটবে না।’
এদিকে, পিজিসিবি সূত্র বলছে, সঠিকভাবে ফ্রিকোয়েন্সি না মানার কারণে সঞ্চালন ব্যবস্থা ঝুঁকিতে থাকে। দেশে বিদ্যুৎ বিতরণে সঠিক গ্রিড কোডও মানা হয় না। এসব বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশনা থাকলেও কোনও কোনও ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটছে। যা বন্ধ করার চেষ্টা করা হলেও কোনও কোনও ক্ষেত্রে বন্ধ হচ্ছে না।
এর আগে ২০১৪ সালের নভেম্বরে দেশে ব্ল্যাক আউটের ঘটনা ঘটে। তখন কেন্দ্রগুলো চালু করতে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়। এতে সারাদেশে একসঙ্গে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। এরপরই সরকার জাতীয় গ্রিডের সুরক্ষায় নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করে। তবে, এফজিএমও হচ্ছে সর্বাধুনিক পদ্ধতি, এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে কেন্দ্রগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এই পদ্ধতিতে কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণে এনএলডিসি তাদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ বসেই সব পদক্ষেপ নিতে পারবে।
পিজিসিবির এক কর্মকর্তা বলেন, এখন দেশে সব মিলিয়ে ২০ হাজার মেগাওয়াটের ওপরে উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে।কিন্তু বিপুল পরিমাণ উৎপাদনেও কেন লোডশেডিং, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।গ্রামে লোডশেডিং হচ্ছে নিয়মিত। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য সরকার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তবে, আধুনিক সঞ্চালন ব্যবস্থা না থাকার কথা বারবারই উঠে এসেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, সম্প্রতি ভারতে বিদ্যুৎ রফতানির প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ। কিন্তু ভারতের সঞ্চালন ব্যবস্থা আমাদের থেকে অনেক আধুনিক।তারা ফ্রিকোয়েন্সি সঠিকভাবে মেনে চলার পাশাপাশি গ্রিড কোড মেনে সঞ্চালন করে।কিন্তু দেশে এসব বিষয়ে ঘাটতি থাকায় আদৌ ভারতে বিদ্যুৎ রফতানি সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।এই পরিস্থিতিতে আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুৎ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দেশের গ্রিডের উন্নয়ন করা জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে।