![https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/1600x0x0/uploads/media/2019/12/09/eca24758bb4697b729a30d02ffe375a7-5dee88cdc524c.jpg https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/1600x0x0/uploads/media/2019/12/09/eca24758bb4697b729a30d02ffe375a7-5dee88cdc524c.jpg](https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/1600x0x0/uploads/media/2019/12/09/eca24758bb4697b729a30d02ffe375a7-5dee88cdc524c.jpg)
রোহিঙ্গা সংকট
আইসিজের রায়ই চূড়ান্ত ও অবশ্য পালনীয়, আপিলের সুযোগ নেই: আইসিজের রেজিস্ট্রার
by অনলাইন ডেস্করোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে আইসিজেতে মামলা মিয়ানমারকে এই প্রথম বৈশ্বিক পরিসরে চাপে ফেলেছে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার মামলা আর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) অভিযোগ তদন্তের সিদ্ধান্তে গণহত্যার দায় যে মিয়ানমারের এড়ানোর সুযোগ নেই, সেটা স্পষ্ট
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) করা মামলার শুনানি শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার। এই আদালতের যেকোনো রায়ই চূড়ান্ত, বাধ্যবাধকতাপূর্ণ ও অবশ্যপালনীয়। চূড়ান্ত রায়ের পর আপিলের কোনো সুযোগ নেই।
ইউএন নিউজের কনর লেননের মুখোমুখি হয়ে গত অক্টোবরে এ কথা জানিয়েছেন জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আইসিজের নবনিযুক্ত রেজিস্ট্রার ফিলিপ গটিয়ার। তিনি আইসিজেতে নিযুক্ত হওয়ার আগে সমুদ্র আইনবিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
কনর লেনন ও ফিলিপ গটিয়ারের মধ্যকার আলোচনায় জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা হিসেবে আইসিজের ভূমিকা, এর কার্যপ্রণালিসহ বিভিন্ন দিক উঠে আসে। আলাপের শুরুতেই ফিলিপ গটিয়ার বৈশ্বিক মঞ্চে আইসিজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ সনদ মোতাবেক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় সবচেয়ে জরুরি কাজগুলো সম্পাদনে আইসিজের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জানি যে যখনই রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়, তখনই বলপ্রয়োগের মাধ্যমে তার মীমাংসা করার একটি সাধারণ প্রবণতা দেখা যায়। রাষ্ট্রের সামনে তাই এমন একটি আন্তর্জাতিক আদালতের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, যেখানে বিচারের জন্য তারা তাদের বিরোধকে উত্থাপন করতে পারবে এবং যা এই বিরোধের একটি মীমাংসা প্রস্তাব করতে পারবে। এটিই এই আদালতের মুখ্য ভূমিকা। আমি বলতে চাই, সারা বিশ্বের জন্য এটিই একমাত্র স্থায়ী আদালত, যেখানে ন্যায্যতার অস্তিত্ব রয়েছে এবং যা জাতিসংঘের প্রধান বিচারিক অঙ্গ। “বিচারিক অঙ্গ” পরিভাষাটির ওপর আমি জোর দিতে চাই। কারণ, সদর দপ্তর নিউইয়র্ক থেকে দূরে হওয়ায় এর সম্পর্কে সবাই জানে না। এর অবস্থান দ্য হেগে হলেও এটি জাতিসংঘেরই অঙ্গ।’
ফিলিপ গটিয়ার আইসিজের দুই ধরনের সক্ষমতার কথা তুলে ধরেন। প্রথমত, রাষ্ট্রগুলোর দ্বারা নির্ধারিত আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে তাদের মধ্যে বিদ্যমান বিরোধ নিষ্পত্তিই আইসিজের মুখ্য কাজ। অন্যদিকে, এই আদালতের আইনি কাঠামোর মধ্যে নেই কিন্তু থাকা প্রয়োজন—এমন কিছু বিষয়েও এ আদালত পরামর্শ দিতে পারেন। বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আইসিজে মূলত বিবদমান পক্ষগুলোর অধিকার ও দায়িত্বের পরিসরটি স্পষ্ট করে করণীয় সম্পর্কে তার সিদ্ধান্ত জানায়, যাকে বলে বাইন্ডিং জাজমেন্ট। এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে যে বিবদমান দেশগুলো এ সিদ্ধান্ত মানে কি না বা এমন কোনো উদাহরণ রয়েছে কি না, যেখানে কোনো পক্ষ আইসিজের সিদ্ধান্ত মানেনি? আইসিজের সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্যের ফল কী?
![https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/1600x0x0/uploads/media/2018/01/16/6173e3a9be847b68718d72f6e5b4c8d2-5a5d89a47836d.jpg https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/1600x0x0/uploads/media/2018/01/16/6173e3a9be847b68718d72f6e5b4c8d2-5a5d89a47836d.jpg](https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/1600x0x0/uploads/media/2018/01/16/6173e3a9be847b68718d72f6e5b4c8d2-5a5d89a47836d.jpg)
এ বিষয়ে ফিলিপ গটিয়ার বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে এটি একটি চিরায়ত প্রশ্ন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সংযোগ ছাড়া রায় কার্যকরের কোনো পদ্ধতি নেই। উপযুক্ত ক্ষেত্রে তেমন সম্ভাবনা থাকলেও সে বিষয়ে কথা না বলাই ভালো। আদালতের (আইসিজে) যেকোনো রায়ই চূড়ান্ত, বাধ্যবাধকতাপূর্ণ ও অবশ্যপালনীয়। আপিলের কোনো সুযোগ নেই। কার্যক্ষেত্রে এর রেকর্ড বেশ ভালো, যা নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি।’ আপিলের সুযোগ না রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের ধরনই এমন। কোনো আন্তর্জাতিক আদালতের চূড়ান্ত রায় আসার পর তার বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ নেই।
জাতিসংঘের সর্বোচ্চ এই আদালত আইসিজে ‘ওয়ার্ল্ড কোর্ট’ নামেও পরিচিত। নেদারল্যান্ডসের শহর দ্য হেগে এই আদালত অবস্থিত। আইসিজে ১৫ জন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত, যাঁদের প্রায় কাছাকাছি সময়ে নিরাপত্তা পরিষদ বা সাধারণ পরিষদ নির্বাচিত করে। বিভিন্ন ক্ষেত্রের লোকেদের বিচারক হিসেবে নির্বাচন করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় কিছু আইনি বৈধতার বিষয় রয়েছে, এখন পর্যন্ত যা সুপরিকল্পিত একটি ব্যবস্থা হিসেবে প্রমাণিত। এটি বেশ ভালোভাবে কাজ করছে বলেও দাবি করেন ফিলিপ গটিয়ার।
![https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/1600x0x0/uploads/media/2019/12/09/f8c9cc86db600730c4200ab02a71cbd1-5dee8a0dced90.jpg https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/1600x0x0/uploads/media/2019/12/09/f8c9cc86db600730c4200ab02a71cbd1-5dee8a0dced90.jpg](https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/1600x0x0/uploads/media/2019/12/09/f8c9cc86db600730c4200ab02a71cbd1-5dee8a0dced90.jpg)
১৯৪৬ সালে গঠিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত আইসিজেতে ১৭৭টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি মামলার এখনো রায় হয়নি। এসব মামলার ৫০ শতাংশই হয়েছে গত ৩০ বছরে। এই পরিসংখ্যানকে আইসিজে ও এর পদ্ধতির গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ হিসেবে দাবি করেন গটিয়ার। আইসিজেতে মামলা করাটা সহজ কিছু নয় উল্লেখ করে গটিয়ার বলেন, এটি পৌর আইনের মতো নয়, যেখানে চাইলেই বিচারকের সামনে কোনো মামলা হাজির করা যায়। আন্তর্জাতিক আইনে এ জন্য সুনির্দিষ্ট দুটি পক্ষের দরকার পড়ে। নানাভাবে, কোনো ঘোষণা বা একপক্ষীয় পদক্ষেপের মাধ্যমে এটি ঘটতে পারে। পরস্পরের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ পক্ষগুলোও একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে পারে। চুক্তি কিংবা সমঝোতার কোনো ধারা কিংবা বিরোধের জের ধরেও কেউ আদালতের শরণ নিতে পারে। আবার উভয় পক্ষ নিজেদের বিরোধের মীমাংসা চেয়ে আদালতের শরণ নিতে পারে—এটি অবশ্য তেমন সহজ কিছু নয়। কারণ, যেকোনো বিরোধেই একটি পক্ষ থাকে, যার আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।
আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তায় আইসিজের ভূমিকার বিষয়টিও উঠে আসে কনর লেনন ও ফিলিপ গটিয়ারের আলোচনায়। ফিলিপ গটিয়ার বেশ জোরের সঙ্গে বলেন, সীমান্ত, সমুদ্রসীমা থেকে শুরু করে শান্তি ও নিরাপত্তার নানা ক্ষেত্রে আইসিজে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। অনেকগুলো মামলার কথা উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়। বর্তমানে সোমালিয়া ও কেনিয়া কিংবা নিকারাগুয়া ও কলম্বিয়ার সঙ্গে গায়ানার মামলাগুলো সীমান্ত নিয়েই। ইতিহাসের দিকে তাকালে এই সীমানাই বহু যুদ্ধের কারণ হিসেবে আবির্ভূত হবে। এসব বিষয়ে শান্তিপূর্ণ সমঝোতার জন্য বিশ্বের সামনে কিছু উপায় থাকা জরুরি, যা উত্তেজনার প্রশমন করবে। এ ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার একটি মামলার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে, যার রায় সম্প্রতি হয়েছে। বিশ্বাসঘাতকতার দায়ে পাকিস্তানে এক ভারতীয়র বন্দী থাকা নিয়ে মামলাটি হয়েছিল। এটি খুবই উত্তেজনাপূর্ণ একটি বিষয় ছিল। দুটি দেশের মধ্যে এটি উত্তেজনা তৈরি করতে পারত। কিন্তু আইসিজের উপস্থিতি এর প্রশমন ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, ‘সব ধরনের সংঘাতের সমাধান হয়তো আমরা দিতে পারব না। কিন্তু গুরুতর কিছু হওয়া রোধ কিংবা আংশিক সমাধান আমরা দেওয়ার চেষ্টা করতে পারি।’
রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ এনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিজেতে মামলা করে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী ১১ নভেম্বর বিষয়টি প্রকাশ করেন। ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এই মামলা করে গাম্বিয়া। এই পরিপ্রেক্ষিতেই শুনানি শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার। এদিকে গাম্বিয়াকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কানাডা ও নেদারল্যান্ডস।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট নিরাপত্তাচৌকিতে সন্ত্রাসীদের হামলাকে অজুহাত দেখিয়ে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর চরম নৃশংসতা শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। নির্বিচার হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন থেকে বাঁচতে পরের কয়েক মাসে অন্তত সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। জাতিসংঘ এই নৃশংসতাকে গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করেছে।