https://paloimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/1600x0x0/uploads/media/2019/12/09/5572ce23e60ee324c524f67e9606d746-5dee6bedb6bf6.jpg
টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক, রুশনারা আলী ও রূপা হক । ছবি সংগৃহীত
যুক্তরাজ্যে নির্বাচন

এবার দৃষ্টি বাঙালি চার কন্যার দিকে

by

যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে নিজ আসন ধরে রাখতে লড়ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিন কন্যা—টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক, রুশনারা আলী ও রূপা হক। তাঁদের সঙ্গে এবার সম্ভাবনায় প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন আরেক বাঙালি কন্যা আফসানা বেগম। বাংলাদেশি অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনের পপলার অ্যান্ড লাইম হাউস আসনে আফসানার বিজয় অনেকটা সুনিশ্চিত বলে ধরা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের সংসদ নির্বাচনে এবার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কমপক্ষে ১০ জন প্রার্থী নির্বাচন করছেন। তবে আলোচনা-প্রত্যাশা ওই চার কন্যাকে ঘিরে। এঁরা চারজনই বামধারার রাজনীতিক দল লেবারের প্রার্থী।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ (ব্রেক্সিট) কার্যকর করা নিয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থার কারণে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ১২ ডিসেম্বর মধ্যবর্তী নির্বাচনের ডাক দেন। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এটি যুক্তরাজ্যে তৃতীয় সাধারণ নির্বাচন। ২০১৭ সালের ৮ জুন দেশটিতে সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে চার স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মোট ১৪ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে নির্বাচিত হন আসন ধরে রাখার লড়াইয়ে আছেন-রুশনারা, রূপা ও টিউলিপ।

প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এই নির্বাচনকে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে রায় দেওয়ার শেষ সুযোগ হিসেবে অভিহিত করেছেন। বাঙালি এই চার প্রার্থীর আসনের প্রায় ৭০ শতাংশ ভোটার ২০১৬ সালের গণভোটে ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল। অভিবাসী অধ্যুষিত লন্ডনের এই আসনগুলো লেবার দলের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

টিউলিপ সিদ্দিক
উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের হ্যামস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনটি ধরে রাখার লড়াইয়ে নেমেছেন টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক। ২০১৫ সালে লেবার দলের মনোনয়ন পেয়ে প্রথমবারের মতো ব্রিটিশ এমপি নির্বাচিত জন টিউলিপ। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে টিউলিপের ভোটের ব্যবধান ছিল মাত্র ১ হাজার ১৩৮। ২০১৭ সালে ১৫ হাজার ৫৬০ ভোটের ব্যবধানে পুনর্নির্বাচিত হয়ে তিনি নিজের শক্ত অবস্থান জানান দেন। এবার তাঁর সামনে হ্যাটট্রিক বিজয়ের চ্যালেঞ্জ।

টিউলিপ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে। একদিকে পারিবারিক পরিচয়, অন্যদিকে লন্ডনের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনে প্রার্থিতা-তাই টিউলিপ সব সময়ই আলোচনার কেন্দ্রে।

রূপা হক
২০১৫ সালের নির্বাচনে লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসন থেকে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন রূপা হক। মাত্র ২৭৪ ভোটের ব্যবধানে তিনি বিজয় পেয়েছিলেন। ২০১৭ সালের নির্বাচনে সেই ব্যবধান বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৮০৭ ভোটের। রূপার সামনেও এবার হ্যাট্রিকের চ্যালেঞ্জ। স্থানীয় মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে নিজের অবস্থান সুসংহত করা রূপা এবারও বড় ধরনের বিজয় পাবেন বলে প্রত্যাশা। রূপা হক কিংসটন ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা লন্ডনে। বাংলাদেশে আদি বাড়ি পাবনায়।

রুশনারা আলী
২০১৭ সালের নির্বাচনে পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনে টানা তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন রুশনারা আলী। প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির চার্লট চিরিকোর চেয়ে ৩৫ হাজার ৫৯৩ ভোট বেশি পেয়ে তিনি টানা তৃতীয়বার ব্রিটিশ এমপি নির্বাচিত হন। এবার লড়ছেন চতুর্থ মেয়াদের জন্য। বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস বারার অধীন রুশনারার আসনটি লেবার দলের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

২০১০ সালে এই আসনে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন রুশনারা। তাঁর ওই বিজয়ের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশিদের অভিষেক ঘটে।

রুশনারার জন্ম সিলেটের বিশ্বনাথে। ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়ে তিনি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও শিক্ষা-বিষয়ক ছায়ামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পার্লামেন্টারি ট্রেজারি সিলেক্ট কমিটির সদস্য হিসেবে মেয়াদ পূর্ণ করেন। সর্বশেষ প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ সরকারের আমলেই তিনি বাংলাদেশ-বিষয়ক বাণিজ্য দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

আফসানা বেগম
টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকারই আরেকটি আসন পপলার অ্যান্ড লাইম হাউস। এ আসনে প্রায় দুই দশক ধরে লেবার দলের এমপি ছিলেন জিম ফিটজপেট্রিক। চলতি বছরের শুরুর দিকে তিনি আর নির্বাচন না করার ঘোষণা দেন। ফলে লেবার দলের নিরাপদ এই আসনে নতুন প্রার্থী কে হচ্ছেন তা নিয়ে শুরু হয় মনোনয়নের লড়াই। অনেকটা চমক জাগিয়ে লেবার দলের মনোনয়ন পান রাজনীতিতে অপেক্ষাকৃত তরুণ বাঙালি কন্যা আফসানা বেগম।

টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের আবাসন বিভাগে কর্মরত আফসানা বেগম লেবার পার্টির টাওয়ার হ্যামলেটস শাখার সহসভাপতি। তিনি লেবার দলের লন্ডন রিজিয়ন শাখার সদস্য। আফসানার জন্ম ও বেড়ে ওঠা টাওয়ার হ্যামলেটসেই। বাংলাদেশে আদি বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে।

এ ছাড়া এবারের নির্বাচনে আবারডিন নর্থ আসনে নুরুল হক আলী এবং সাউথওয়েস্ট হার্টফোর্টশায়ার আসনে আলী আখলাকুল লেবার দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। লিবারেল ডেমোক্র্যাটস দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন দুই বাঙালি। এদের মধ্যে কার্ডিফ সেন্ট্রাল আসনে বাবলিন মল্লিক এবং উইয়ার ফরেস্ট আসনে সাজু মিয়া। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের পক্ষে হ্যারো ওয়েস্ট আসনে প্রার্থী হয়েছেন আনোয়ারা আলী। তিনি কনজারভেটিভ দল থেকে মনোনয়ন পাওয়া একমাত্র বাঙালি প্রার্থী।