অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের সুখে থাকতে দেবে না দুদক ॥ দুদক চেয়ারম্যন

http://www.dailyjanakantha.com/files/201912/1575892872_10.jpg

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যখন দুর্নীতি-সহিংসতার মতো বিষয়গুলো বাড়ে,তখন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্রয়োজন হয়। সব খবরই সন্ধান করে বের করতে হয়। তাই সব সাংবাদিকতাই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা। তবে অনেক সংবাদ আছে যেগুলো প্রতিকূলতার মধ্যে বের করে আনতে হয়। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ভিত্তি খুবই নৈতিক। সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ : প্রেক্ষিত গণমাধ্যম জবরদখল শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ন্যায়পাল অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। আলোচনা সভা শেষে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০১৯ দেয়া হয়।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম অনলাইন গণমাধ্যমকে যারা প্রতিদ্বন্দি মনে করেন তাদের উদ্দেশে বলেন, অনলাইনকে কেন প্রতিদ্বন্দি ভাবছি? এখন ডিজিটাইজেশনের যুগে সংবাদমাধ্যমে প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। অনলাইন গণমাধ্যম বিকশিত হচ্ছে। সাংবাদিকতাকে অনেকে চাকরি হিসেবে নিচ্ছেন। পেশা হিসেবে নিতে পারছেন না। তিনি বলেন, নিজেকে শিক্ষক পরিচয় দিতে এখন লজ্জা লাগে। ছাত্রনেতাদের ধমকে শিক্ষকরা ভয় পান। আগে শিক্ষক সমিতি কার্যকর ও শক্তিশালী ছিল। কোনো আন্দোলন হলে পরবর্তী কর্মসূচির জন্য গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ঘুর ঘুর করত। কিন্তু এখন শিক্ষকদের কোনো ভিত নেই।

টেলিভিশন সাংবাদিকদের সমালোচনা করে এ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, যারা বিভিন্ন ইভেন্টে লাইভ করেন, তারা অনেক কষ্ট করেন। কিন্তু একসঙ্গে ১০টি বাংলা শব্দ বলা মনে হয় খুব কষ্টের? তখন, আসলে, কিন্তু, অ্যা, যেমনটা বলছিলাম, আপনি জানেন- এসব শব্দ বলতে বলতে তারা সময়ক্ষেপণ করেন। বাংলা ভাষার এত দুর্দিন আমি কখনো দেখিনি। অথচ বিদেশি সাংবাদিকদের দেখেন। তারা খুব অল্প সময়ে অনেকগুলো বিষয়ে কথা বলেন। টু দ্য পয়েন্টে কথা বলেন।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গণমাধ্যমে একটি ভীতিপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। টিকে থাকার জন্য অনেকে কম্প্রোমাইজ করছে। তবে বেসিক জায়গা থেকে বিচ্যুত হচ্ছে না। তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতই বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমও ঝুঁকির মধ্যে আছে। বিশেষ করে এই দেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য ঝুঁকিটা বেশি। এর মধ্য দিয়েই সাংবাদিকদের টিকে থাকতে হবে। চাপের মুখে থেকেও সাংবাদিকতার মান ও নৈতিকতার সাথে আপোষ না করে নিজেদের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচারের মাধ্যমে পেশাগত উৎকর্ষ সাধন নিশ্চিত করতে হবে

সাংবাদিক জুলফিকার আলী মানিক বলেন, সাংবাদিকতা এখন প্রচারযন্ত্র হয়ে গেছে। মাইক্রোফোনের মতো। কিন্তু এই সময়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বেশি হওয়ার কথা ছিল। সাংবাদিকদের যে চরিত্র ছিল, সেটা পরিবর্তন হয়েছে। নিজেদের সুখ, স্বাচ্ছদ্য, ভোগ-বিলাস নিশ্চিতের জন্য সাংবাদিকরা দৌড়াচ্ছেন। সাংবাদিক হিসেবে গণমানুষের কণ্ঠ হতে হবে, তা হতে চাই না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, সাংবাদিকতায় পেশাদারিত্বের অভাব ও স্বাধীনতার অভাব রয়েছে। পোশাদারিত্ব না থাকায় গণমাধ্যম জনগণের জন্য সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। মার্কেট যাচাই না করেই মিডিয়া বাজারে আসছে,উল্লেখ করে তিনি বলেন,বিশ্বে যেখানে পত্রিকা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেখানে আমাদের নতুন নতুন পত্রিকা বের হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে অন্য আলোচকরা বলেন,পৃথিবীর সব দেশেই সাংবাদিকতা কঠিন হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ এখন অনেক বেশি। এর মধ্যেই সাংবাদিকরা ঝুঁকি নিয়ে তাদের কাজ করে যাচ্ছেন। তাই আগামীতেও ভয় ভীতির উর্ধ্বে থেকে সাংবাদিকদের কাজ করে যেতে হবে। সাংবাদিকতাকে আদর্শিক জায়গা থেকে গ্রহণ করে সাংবাদিকদের পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পূর্ণ পেশাগত প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

আলোচনা শেষে টিআইবির দুর্নীতিবিরোধী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। এবছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট ১০ জন সাংবাদিককে এই পুরস্কার দেয়া হয়। প্রিন্ট মিডিয়া-আঞ্চলিক ক্যাটাগরিতে যশোরে দরিদ্র মায়েদের জন্য সরকারের মাতৃত্বকাল ভাতা প্রদান কর্মসূচিতে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দায়িত্বে অবহেলাসহ নীতিমালায় দূর্বলতা নিয়ে প্রকাশিত ৭ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের জন্য যৌথভাবে পুরস্কার অর্জন করেন যশোরের দৈনিক গ্রামের কাগজের চিফ রিপোর্টার এম. আইয়ুব, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার মোতাহার হোসাইন ও ফয়সাল ইসলাম, স্পেশাল করেসপনডেন্ট দেওয়ান মোরশেদ আলম, স্টাফ রিপোর্টার স্বপ্না দেবনাথ, মিনা বিশ^াস, এস এম আরিফুজ্জামান ও উজ্জল বিশ^াস।

প্রিন্ট মিডিয়া- জাতীয় ক্যাটাগরিতে ‘তিতাসে কেজি মেপে ঘুষ লেনদেন’ শিরোনামে দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পুরস্কার অর্জন করেন প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার ও সাংবাদিক ফখরুল ইসলাম হারুন। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া-প্রতিবেদন ক্যাটাগরিতে ‘রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের ঋণ বিষয়ক দুর্নীতি ও অনিয়ম শিরোনামে চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরে প্রচারিত তিন পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের জন্য পুরস্কার লাভ করেন চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের সিনিয়র রিপোর্টার ও সাংবাদিক ইকবাল আহসান। আর ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া-প্রামাণ্য অনুষ্ঠান ক্যাটাগরিতে পুরস্কার লাভ করে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের প্রামাণ্য অনুষ্ঠান অনুসন্ধান টিম।