অবৈধ সম্পদ শান্তিতে ভোগ করতে দেব না: দুদক চেয়ারম্যান
by নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঅবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের সুখে শান্তিতে সে সম্পদ ভোগ করতে দেওয়া হবে না। দেশের ভেতরে তো নয়, দেশের বাইরে পালিয়ে গেলেও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাদের তাড়া করবে। এমনটাই জানিয়েছেন দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।
আজ সোমবার সকালে দুদক কার্যালয়ের সামনে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইকবাল মাহমুদ এসব কথা বলেন। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি নয়, বার্তা আছে। দুর্নীতিবাজ কিংবা দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিরা দুর্নীতির মাধ্যমে যে সম্পদ গড়ে তোলেন তা আসলে তাদের সম্পদ নয়। এটা জনগণের সম্পদ। সেই জনগণের সম্পদ দেশে-বিদেশে যেখানেই থাকুক না কেন, আপনি সুখে তা ভোগ করবেন? সেই সুখে থাকার ব্যবস্থা আমরা রাখব না। আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, সেই অবৈধ সম্পদ ভোগ করতে দেব না, দেব না, দেবে না।’
আজ সকাল সাড়ে নয়টায় দুদক কার্যালয়ের সামনের সড়কে পায়রা ও ফেস্টুন উড়িয়ে দিবসটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন দুদক চেয়ারম্যান। এ সময় দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলামসহ কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাঁর সঙ্গে ছিলেন। এর আগে কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ কমিশনারকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় পতাকা এবং কমিশনের পতাকা উত্তোলন করেন।
উদ্বোধনের পরপরই কমিশনের মিডিয়া সেন্টারে রক্ষিত রেজিস্ট্রারে নিজে স্বাক্ষরের মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী গণস্বাক্ষর কর্মসূচি এবং পোস্টার ও কার্টুন প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন দুদক চেয়ারম্যান । রেজিস্ট্রারটি ৯ ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সর্বসাধারণের স্বাক্ষরের জন্য দুদক মিডিয়া সেন্টারে উন্মুক্ত রাখা হবে। দুদক চেয়ারম্যান দুর্নীতিবিরোধী গণস্বাক্ষর রেজিস্ট্রারে সই করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিজ নিজ অবস্থান তুলে ধরার জন্য নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
এ সময় দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতি শুধু বাংলাদেশের একক সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক সমস্যা। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এ জাতীয় সমস্যা একক দেশ বা একক প্রচেষ্টায় নির্মূল করা কঠিন। তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ছাত্র-শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, সরকার, মিডিয়াসহ সবার সমন্বিত ও পূর্ণ আন্তরিকতা নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।
মানববন্ধনে হাজারো মানুষ
আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসের অনুষ্ঠান উদ্বোধনের পর রাজধানীর রমনা এলাকায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন কার্যালয়ের সামনের সড়কে দুর্নীতিবিরোধী মানববন্ধন করে দুদক। দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনারের নেতৃত্বে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় ও ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, দুদকের প্যানেল আইনজীবী, ঢাকা মহানগর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য, গার্ল গার্লস গাইড, বয়েজ স্কাউট, সততা সংঘের সদস্য, আনসার, বিএনসিসি, বিভিন্ন এনজিও, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, এনজিওবিষয়ক ব্যুরো, ঢাকা জেলা প্রশাসনসহ সর্বস্তরের মানুষ মানববন্ধনে অংশ নেয়। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে দুর্নীতিবিরোধী মানববন্ধনে দুর্নীতিবিরোধী প্ল্যাকার্ড, ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে অংশ নেন হাজারো মানুষ। দুদক জানিয়েছে, ঢাকার পাশাপাশি দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় একই সময়ে দুর্নীতিবিরোধী এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
সততা সংঘের সমাবেশ
বেলা ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি শিক্ষার্থী ও সততা সংঘের সদস্যদের এক সমাবেশ হয়। এ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, দেশ অনেক দিক দিয়ে এগিয়েছে, তবে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে পারলে আরও এগিয়ে যেত। তিনি আরও বলেন, দুদক চেয়ারম্যান যথার্থই বলেছেন একক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। দেশের নাগরিকদের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব জাগিয়ে তুলতে হবে। শিক্ষার্থীরা যদি প্রথম থেকেই দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব যেমন নকলমুক্ত থাকা, প্রক্সি না দেওয়া, ভর্তি বাণিজ্যের মতো অনৈতিকতা থেকে মুক্ত থাকতে পারে; তাহলে তারা দুর্নীতি করবে না, অন্যকে দুর্নীতি করতেও দেবে না। ছাত্র-ছাত্রীরা এভাবে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে বেড়ে উঠলে বাংলাদেশ একদিন দুর্নীতিমুক্ত হবে।
অনুষ্ঠানে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘দুর্নীতির কারণেই শহীদদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে আমরা পুরোপুরি পূরণ করতে পারিনি। ৪৮ বছর ধরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম চলছে। এটা লজ্জার। শুধু দুদকের মতো একটি প্রতিষ্ঠান একা যুদ্ধ করে দুর্নীতি হয়তো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বন্ধ করতে পারবে না। তবে আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হচ্ছে তরুণ প্রজন্মের এসব শিক্ষার্থীরা, যারা ২০৩০ সালের বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মাত্র গুটি কয়েক মানুষের দুর্নীতির কাছে আমাদের পরাজয়ের কোনো সুযোগ নেই। এই লড়াইয়ে বিজয়ের কোনো বিকল্প নেই। ছাত্র-শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সরকার, রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, আইনজীবী, মিডিয়া সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় দুর্নীতিবাজদের পরাভূত করা হবে। এই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। দুর্নীতিবাজদের আইনের মুখোমুখি করা হচ্ছে এবং করা হবে। ঘুষখোর-মুনাফাখোর-দুর্নীতিবাজদের অবৈধ সম্পদ ভোগ করার সুযোগ দেওয়া হবে না। দেশ থেকে বিদেশে পালিয়েও রক্ষা পাবেন না।’
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম, সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখ্ত প্রমুখ।