জীবিকা নির্বাহের হাতিয়ার যখন পিঁপড়ার ডিম

by

পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য নানা মানুষ নানা ধরনের কাজকে জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়ে থাকে। তেমনি একজন জয়পুরহাটের বেলাল হোসেন। তিনি নালশে বা লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে সেগুলো বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলা চত্বরে সকালে দেখা যায় একটা লম্বা বাঁশের মাথায় ছাতা ও থলে হাতে এক জন যুবক গাছে গাছে তন্ন তন্ন করে কি যেন খুঁজছেন। কৌতুহলবশত তার কাছে গিয়ে জানা যায় তার নাম বেলাল হোসেন। তিনি লালশো বা লাল পিঁপড়া বাসার খোঁজ করছেন। তবে যেমন তেমন বাসা হলে চলবে না, চাই ডোল পিঁপড়ার বাসা, যেখানে মিলবে প্রচুর পরিমান সাদা রঙের ডিম। এই পিঁপড়ার ডিমই যে তার জীবিকা নির্বাহের হাতিয়ার।

বেলাল হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত মেহগনি, আম, লিচুসহ দেশীয় গাছগুলোতেই ডোল পিঁপড়ার বাসা পাওয়া যায়। লালা ব্যবহার করে গাছের ডালের আগার দিকের চার-পাঁচটা পাতা জোড়া দিয়ে শক্ত বাসা তৈরি করে পিঁপড়ার দল। পরে সেখানে তারা ডিম পারে। বড় বাসা থেকে একশ থেকে দেড়শ গ্রাম ডিম পাওয়া যায়। আশ্বিন-কার্তিক মাসে দিকে এই ডিমের চাহিদা থাকে বেশি। তবে সব থেকে বেশি ডিম পাওয়া যায় শীতের শেষে দিকে ফাল্গুন মাসে। কিন্তু সেই সময় ডিমের চাহিদা তেমন একটা থাকে না।

এই ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজটি খুব সতর্কতার সাথে করতে হয়। কারণ ডিম আস্ত না রাখলে মাছ তা খায় না।

বেলাল হোসেন জানান, লালশো বা লাল পিঁপড়ার ডিম প্রতি কেজি ৭শ টাকা থেকে শুরু করে ১২শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। সাধারণত সৌখিন মাছ শিকারীরা তার কাছ থেকে এই ডিম ক্রয় করে থাকেন। এই ডিম মাছের খুব প্রিয় খাবার।

বড়শিতে আটা-ময়দা-পাউরুটি, একানির মতো আধারের সঙ্গে লালশো বা লাল পিঁপড়ার ডিম দেয়া হলে বড় মাছেরা সহজে টোপ গেলে। এজন্য সৌখিন মাছ শিকারি বা টিকিট কিনে মাছ শিকার করেন যারা, তাদের কাছে জনপ্রিয় টোপ পিঁপড়ার ডিম। পানির নির্দিষ্ট স্থানে খাবার ফেলে মাছ ডেকে আনার জন্য এই ডিমের চাহিদা রয়েছে জেলেদের কাছেও। এজন্য অনেক সময় জেলেরা তাদের কাছ থেকে ডিম কিনে থাকেন।

বেলাল আরো জানান, তিনি গরিব মানুষ। দীর্ঘ ১২ বছর যাবত এ কাজ করেন । এই কাজে কোন পুঁজি লাগে না। এজন্য তিনি এটাকে জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসাবে বেঁছে নিয়েছেন। সারাদিনে তিনি এক থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করতে পারেন। আর তাতেই চলে তার সংসার।