মৃত্যুর আগে মায়ের শেষ দাবি ছিল ‘ছেলে হত্যার বিচার’

by

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার টেমদী গ্রামের ব্যবসায়ী মাহবুব মিয়া ইসহাক বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে আট মাস চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। দীর্ঘ আটমাস সন্তানের যন্ত্রণা ও বেঁচে থাকার করুণ আর্তনাদে মা সুফিয়া বেগম নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দেন। চোখের সামনে নিজের সন্তানের করুন মৃত্যুর শোকে, যন্ত্রনায় আর এবং বিচারহীনতার ঘৃনায় ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন সুফিয়া বেগম। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার শেষ দাবি ‘ছেলে হত্যার বিচার।’

শনিবার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে পরলোক গমন করেন তিনি। ছেলের মৃত্যুর শোক আর হত্যাকারীদের একের পর এক হামলার যন্ত্রণায় তার এমনভাবে চলে যাওয়ায় শোকে স্তব্দ পুরো এলাকা।

জানা যায়, সোনারগাঁ উপজেলার সনমান্দী ইউনিয়নের টেমদী গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মাহবুব মিয়া একই এলাকার সন্ত্রাসী ইছহাক মিয়ার দাবিকৃত চাঁদা না দেয়ায় গত বছরে ৩১ ডিসেম্বর পিটিয়ে ও কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত কার হয়। এ ঘটনায় দীর্ঘ আট মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ২৩ আগস্ট তিনি মারা যান।

এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই তাহসিন মিয়া বাদী হয়ে ইসহাক গংয়ের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। দায়েরকৃত মামলার আসামিরা জামিনে মুক্তি পেয়ে ইসহাক মিয়ার নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জনের একদল সন্ত্রাসী নিহত মাহাবুব হোসেনের চাচা প্রবাসী হালিম মিয়ার ঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়ে একে একে তিনটি ঘরে অগ্নি সংযোগ করে। ইসহাক বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ব্যাপারে বার বার সোনারাগাঁ থানায় অভিযোগ ও মামলা করলেও প্রশাসনের নিরবতায় সন্ত্রাসীরা আরো বেপরোয়া হয়ে পড়ে। ছেলের মৃত্যুশোক পরবর্তীতে সন্ত্রাসীদের তান্ডব সুফিয়া বেগমকে একেবারে দুর্বল করে দেয়। মৃত্যু তাকে বিচারহীনতার উর্ধ্বে নিয়ে যায়।

হত্যা মামলার বাদী ও নিহতের ভাই তাহসীন মিয়া জানান, ‘সন্ত্রাসী ও একাধিক হত্যা মামলার আসামি ইছহাক মিয়া এবং তার বাহিনী আমার ভাইকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেই ক্ষান্ত হননি, তারা আমাদের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুরসহ লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এভাবে একের পর এক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তারা আমাদের সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমার ভাইয়ের হত্যার ঘটনায় পাগলপ্রায় মা সন্ত্রাসীদের একের পর এক কর্মকাণ্ডে আর ছেলের মৃত্যুর শোকে বিচারহীন পৃথিবী ছেড়ে চলে যান।’

অভিযুক্ত ইছহাক মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাকে পাওয়া যায়নি।

সোনারগাঁ থানার ওসি মনিরুজ্জামান মনির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, এ ব্যাপারে আমরা মামলা ও অভিযোগ গ্রহন করেছি। দোষীদের গ্রেপ্তারের জন্য থানা পুলিশের বিশেষ টিম কাজ করছে।