বিআরটিসির বাস চালুর ৭ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করলেন শ্রমিকেরা
by প্রতিনিধি, নেত্রকোনাব্যাপক প্রয়োজনের তাগিদে নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ সড়কপথে বিআরটিসির দ্বিতল বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছিল। কিন্তু পরিবহনমালিক ও শ্রমিকদের বাধার মুখে চালু হওয়ার মাত্র সাত ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করে দিতে হয়েছে বহু প্রত্যাশিত এই বাস সার্ভিস। গতকাল রোববার সকাল নয়টায় চালু হয়ে বিকেল চারটায় বন্ধ হয়ে যায় বিআরটিসির বাস চলাচল।
নেত্রকোনা থেকে পাশের জেলা ময়মনসিংহের দূরত্ব মাত্র ৩৮ কিলোমিটার। এই সড়কপথে চলাচলকারী যাত্রীদের জন্য ভালো মানের কোনো বাস বা গেটলক সার্ভিস নেই। দীর্ঘদিন ধরেই যাত্রীরা গেটলক বাসের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিলেন। অবশেষে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গতকাল এই সড়কে বিআরটিসির ১০টি দ্বিতল বাস সার্ভিস চালু করা হয়। শহরের নাগড়া কৃষি ফার্ম এলাকা থেকে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে আধা ঘণ্টা পরপর বাস ছেড়ে যাওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়। নেত্রকোনা থেকে ময়মনসিংহ ভাড়া ধরা হয়েছে ৪০ টাকা এবং শ্যামগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহ ২০ টাকা।
নাগড়া কৃষি ফার্ম এলাকায় ঘটা করে সার্ভিসটির উদ্বোধন করেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের স্থানীয় সাংসদ ও জেলা মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবা রহমান খান। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শাহজাহান মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
প্রথম দিনই ময়মনসিংহ পরিবহনমালিক ও শ্রমিকদের বাধার মুখে বন্ধ করে দিতে হয়েছে বিআরটিসি বাস সার্ভিস। এর প্রতিবাদে আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় পৌরসভা কার্যালয়ের সামনের সড়কে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়। এতে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন ছাড়াও নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন অংশ নেন। কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ হাবিবা রহমান খান।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নেত্রকোনা থেকে ময়মনসিংহে চলাচলের কোনো ভালো যানবাহন নেই। শহরের পারলা এলাকায় ঢাকা বাসস্টেশন থেকে যে বাসগুলো ময়মনসিংহে চলাচল করে, তা খুবই পুরোনো ও নিম্নমানের। বেশির ভাগ বাসের ফিটনেসই নেই। চালকেরাও অদক্ষ। কোনো গেটলক সার্ভিস নেই। ৩৮ কিলোমিটার পথে বাস ভাড়া দিতে হয় ৫৫ টাকা। অনেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ৮০ থেকে ১০০ টাকায় চলাচল করেন।
বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে বিআরটিসির ১০টি বাস এই পথে চলাচলের জন্য উদ্বোধন করা হলেও পরিবহনমালিক ও শ্রমিকদের বাধার মুখে এদিনই বন্ধ করে দিতে হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান না হলে তাঁরা কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বিআরটিসির বাস চলতে না দেওয়া হলে এই সড়কে মালিক সমিতির কোনো বাস জেলাবাসী চলতে দেবেন না।
জানতে চাইলে নেত্রকোনা জেলা বাস পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফ খান দাবি করেন, ‘আমরা পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিকেরা বিআরটিসির কোনো বাস বাধা দিইনি। সরকারি গাড়ি চলাচল ও সিদ্ধান্তে আমাদের বাধা দেওয়ার কোনো কারণ নেই। ময়মনসিংহ ডিপোতে হয়তো সমস্যা থাকতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে মানববন্ধন করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। মানববন্ধন থেকে বক্তারা আমাদের নিয়ে অসত্য বক্তব্য দিয়েছেন। তা ঠিক হয়নি।’
জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, নেত্রকোনা পরিবহন মালিক সমিতির সদস্যদের নিয়ে সকালে (সোমবার) বসা হয়েছিল। তাঁরা জানিয়েছেন, বিআরটিসির বাস চলাচলে তাঁদের কোনো আপত্তি বা বাধা নেই। ময়মনসিংহে একটু ঝামেলা হচ্ছে। সেখানকার জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে পরিবহন মালিক সমিতির সঙ্গে কথা বলছে। হয়তো আজকের মধ্যেই সমস্যা কেটে যাবে।
নেত্রকোনাবাসীর ব্যানারে জেলা দুর্নীতি দমন কমিটির সভাপতি নারীনেত্রী বেগম রোকেয়ার সভাপতিত্বে ও নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ এমরানের সঞ্চালনায় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন মহিলা পরিষদ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাহেজা বেগম, উদীচীর সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান খান, জেলা আওয়ামী লীগের সহদপ্তর সম্পাদক চপল দত্ত, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দা শামছুন্নাহার, কবি স্বপন কুমার পাল, স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতির ব্যবস্থাপক কোহিনুর বেগম, ব্র্যাকের জেলা প্রতিনিধি প্রবাল সাহা, নেত্রকোনা সরকারি কলেজের সাবেক সহসভাপতি দেব শংকর রায়, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মারুফ হাসান খান, সাংবাদিক এ কে এম আবদুল্লাহ, জেলা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলপনা বেগম, সংস্কৃতিকর্মী শিল্পী ভট্টাচার্য, ছড়াকার সঞ্জয় সরকার ও নবনাট্য সংঘের সভাপতি সালাউদ্দিন খান।