তালায় জনবহুল এলাকায় দুই ইটভাটা, নজর নেই প্রশাসনের

by

ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবশেষে সারক্ষীরার তালার জেঠুয়ায় কৃষি জমিতেই গড়ে উঠেছে ইটভাটা। মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে গড়ে উঠেছে মুন নামের একটি ইটভাটা। চলতি মৌসুমে জনবহুল এলাকার কৃষি জমিতে নতুন করে একই এলাকায় গড়ে উঠল 'বিসমিল্লাহ ব্রিকস' নামে আরেকটি ইটভাটা। এতে করে জনবহুল এলাকার সাধারণ মানুষের পাশাপাশি প্রাচীনতম গ্রাম্য জেঠুয়া হাট-বাজার, জালালপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জাগরণী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এতিম খানা, জেঠুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জনবহুল ঘোষ পাড়া, কপোতাক্ষের কোল ঘেঁষা মালোপাড়া আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে গেলো।

এলাকাবাসী জানায়, শুরু থেকেই ভাটা মালিকরা জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ৩ শকোটি টাকা ব্যয়ে খননকৃত কপোতাক্ষের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মাটি কর্তন, নদী তীরের মাটি কর্তন থেকে শুরু করে কৃষকদের প্রলুব্ধ করে কৃষি জমির মাটি কেটে ভাটা পরিচালনা করে আসছে। এতে একদিকে যেমন অবাধ মাটি কর্তনে এলাকা বিরান ভূমিতে রুপ, নিচ্ছে অন্যদিকে এর বিষাক্ত ধোঁয়ায় এলাকার সামগ্রিক পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এর কুফলও ভোগ করতে শুরু করেছেন এলাকাবাসী।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আমরা দেশের উন্নয়নের জন্য শিল্পায়নে যাবো। তবে কৃষিকে বাদ দিয়ে নয়। কেননা, দেশের উন্নয়ন এখনও অনেকাংশে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তিন ফসলী জমিতে তো ইন্ডাস্ট্রি করতেই পারবে না। আর যদি এক ফসলী জমি, যেখানে চাষাবাদ হয় না সেখানে হবে। তবে, যত্রতত্র করতে পারবে না। কৃষি জমি বাঁচাতে হবে। কারণ, ১৬ কোটির ওপর মানুষের মুখের খাবারের জোগান আসে কৃষি থেকেই। 

প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানকে উপেক্ষা করে কৃষি জমি নষ্ট করে সাতক্ষীরার তালায় স্থাপন করা হয়েছে ইট ভাটাগুলো।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে প্রতিবেদনকালে দেখা যায়,সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের জেঠুয়ায় বাহারী প্রচারণায় জনবহুল এলাকার ফসলি জমিতে গড়ে উঠছে বিসমিল্লাহ ব্রিকস ইটভাটা। গত ২৫ জুন মঙ্গলবার এর উদ্ভোধন হয়। অটো ইটভাটার নামে প্রচার করলেও মূলত তারা সেখানে হাওয়া ভাটা তৈরির কার্যক্রম শুরু করেছেন। মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে মুন ব্রিকস নামের আরেকটি ইটভাটার কার্যক্রম চালু রয়েছে। সর্বশেষ দু’দুটি ইটভাটার কারণে এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এলাকাবাসীর মধ্যে রীতিমত আতংক বিরাজ করছে। তারা তদন্তপূর্বক এসব ভাটার কার্যক্রম বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সরেজমিনে প্রতিবেদনকালে দেখা যায়, তালা উপজেলার জেঠুয়া গ্রামের আলহাজ্জ মোবারক হোসেন ও আব্দুর রশিদ সরদারের ছেলে হাফেজ জহুরুল ইসলাম একই এলাকার কামরুল ইসলাম, মো. মোতালেব গংদের কাছ থেকে ১১ নং জালালপুর ইউনিয়নের জেঠুয়া মৌজার জে.এল নং-১৩০,সিট নং-১ এলাকার প্রায় ৪ একর সম্পত্তি ইজারা নিয়ে ২৫ জুন মঙ্গলবার সকালে উদ্ভোধনী আয়োজনের মাধ্যমে ইটভাটা স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। 
 
এলাকাবাসীর দাবি, প্রথমত মালিকপক্ষ অটো ইটভাটার নামে প্রচার দিলেও তারা সেখানে জিকজ্যাক হাওয়া ভাটা তৈরির কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জনবহুল এলাকায় ইটভাটা স্থাপিত হলে এলাকার সামগ্রিক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে সর্বস্তরের মানুষ মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

এখানেই শেষ নয়, নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ভাটার জমির ইজারাদাতা ও মালিকপক্ষ পরস্পর যোগসাজশে বসতভিটা থেকে শুরু করে ফসলি জমির দাগ-খতিয়ান সম্পৃক্ত করে ইজারাচুক্তি সম্পন্ন করলেও মূলত তারা বিআরএস খাস খতিয়ানের জমিতেই ভাটা স্থাপন করছেন।

এছাড়া ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্র) আইন, ২০১৩ এর ৫৯ নং আইনের (বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় ২০ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে প্রকাশিত এবং পরবর্তীতে অধ্যাদেশ নং০২/২০১৮ সংশোধিত) এর প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সম্পূর্ণ ভুল বুঝিয়ে তারা সেখানে ইটভাটার লাইসেন্স নেয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আইনের ৮ এর (১) ধারায় আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি, কৃষিজমি, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা, ডিগ্রেডেড এয়ার শেড এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। একই ধারার উপধারা (২) অনুযায়ী এই আইন কার্যকর হবার পর নিষিদ্ধ এলাকার সীমানার অভ্যন্তরে ইটভাটা স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো আইনের অধীন কোনরুপ অনুমতি বা ছাড়পত্র বা লাইসেন্স, যে নামেই অভিহিত হোক ,প্রদান করতে পারবে না।

আইনের ৩ নং ধারায় ক) উপধারায় বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ এলাকার সীমারেখা হতে ন্যুনতম ১ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে, ঙ) উপধারায় বিশেষ কোনো স্থাপনা রেলপথ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা অনুরুপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান হতে ১ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যেসহ নানা শর্তানুযায়ী ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। 

এ ব্যাপারে ভাটার ম্যানেজার মফিজুল ইসলামের কাছে ভাটার বৈধতা বা কাগজপত্র আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবকিছুই ঠিক আছে। 
 
তালা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শুভ্রাংশু শেখর দাশের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাটার তদন্তভার তার কাছে রয়েছে। তবে ট্রেনিংয়ের কারণে বাইরে থাকায় তিনি এখনো রিপোর্ট জমা দেননি।

এদিকে, তদন্তের আগেই অনুমোদন ও এর কার্যক্রম শুরুর বিষয়টিকে রীতিমত এলাকাবাসী ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছেন। তাদের কার্যক্রমে এলাকাবাসীর রীতিমতো আতংক বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেনের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি উপজেলায় নতুন এসেছেন। এখনো পর্যন্ত এ নিয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। এলাকাবাসী ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে লিখিত অভিযোগ করলে অবশ্যই তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।