যশোরে ভাঙলো মেননের পার্টি, মঞ্চে ঢাকার নেতারা

by
https://cdn.banglatribune.com/contents/cache/images/800x0x1/uploads/media/2019/11/29/da8f5630c7d31287051415dc91710ac7-5de11f0aeeec2.jpg
যশোরে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ‘মতাদর্শ রক্ষা সমন্বয় কমিটি’র সমাবেশ

‘মতাদর্শগত বিরোধের’ অভিযোগ তুলে অবশেষে ভেঙে গেলো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) যশোরের টাউন হল ময়দানের অস্থায়ী অমল সেন মঞ্চে পার্টির নতুন অংশের সম্মেলন উদ্বোধন করেন ব্রিটিশ-ভারতের সর্বভারতীয় কৃষাণ সভার স্বেচ্ছাসেবক নারায়ণ চন্দ্র বসু। আর এই ভাঙনের সময় আত্মপ্রকাশ-মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সিপিবিসহ কয়েকটি বাম দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।

ওয়ার্কার্স পার্টির নতুন অংশের নেতারা জানিয়েছেন, শনিবার (৩০ নভেম্বর) যশোরের শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে একটি মিলনায়তনে নতুন কমিটি গঠন করা হবে। যার সভাপতি কে হবেন, শুক্রবার এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তার নাম ঠিক করা হয়নি। তবে, সম্ভাব্য সাধারণ সম্পাদক হিসেবে থাকছেন পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য ইকবাল কবির জাহিদ। তিনি নতুন কমিটির ‘মতাদর্শ রক্ষা সমন্বয় কমিটি’র সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন।

নতুন অংশের আত্মপ্রকাশ মঞ্চে থাকতে পারেননি ওয়ার্কার্স পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিমল বিশ্বাস। তিনি মোবাইল ফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় মোবাইলের মাধ্যমে সম্মেলনে বক্তব্য দিয়েছি। দলের নতুন নেতৃত্ব শনিবার ঠিক হবে। নেতৃত্বে কে থাকবেন, এখনও তা ঠিক করতে পারিনি। এটা সম্মেলনে নির্ধারণ হবে আশা করি।’

https://cdn.banglatribune.com/contents/cache/images/800x0x1/uploads/media/2019/11/29/cd2b52bc03e65fbb1bd25cd19a810c91-5de11f1f017c2.jpg
যশোরে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ‘মতাদর্শ রক্ষা সমন্বয় কমিটি’র সমাবেশে নেতারা

প্রসঙ্গত, গত ২২ অক্টোবর পার্টির মূল নেতৃত্বের বিচ্যুতির কারণ দেখিয়ে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ থেকে পদত্যাগ করেন ওয়ার্কার্স পাটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পলিটব্যুরো সদস্য কমরেড বিমল বিশ্বাস।  এ ঘটনার চারদিন পর ২৬ অক্টোবর পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে তাকেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।  এরপরে ২৮ অক্টোবর ১০ম  কংগ্রেস বর্জনের ঘোষণা দেন কেন্দ্রীয় আরও ছয় নেতা। তারা হলেন পলিটব্যুরো সদস্য নুরুল হাসান ও ইকবাল কবির জাহিদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জাকির হোসেন হবি, মোফাজ্জেল হোসেন মঞ্জু, অনিল বিশ্বাস ও তুষার কান্তি দাস।

এরআগে, গত ২-৩ নভেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত হয় রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কার্স পার্টির ১০ম কংগ্রেস। ওই কংগ্রেসে মেনন সভাপতি ও ফজলে হোসেন বাদশা দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুর্নির্বাচিত হন।

ওয়ার্কার্স পার্টির নতুন অংশের নেতারা বলছেন, ২০ বছর আগে থেকেই পার্টির ভেতরে রাজনৈতিক সুবিধা আদায় নিয়ে নেতাকর্মীদের অবস্থান তৈরি হয়েছিল। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পর দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মন্ত্রিত্ব, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিষয়ে নাম আসা, বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নাম আসা, সর্বশেষ ক্যাসিনো কারবারিদের সঙ্গে রাশেদ খান মেননের নাম আসার পর দলের ভেতরে বিরোধিতা প্রকাশ্যে আসে। একইসঙ্গে একটি গ্রুপ এ বিষয়গুলোর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।

একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে মেননের স্ত্রী লুৎফুন্নেছা বিউটিকে মনোনয়ন দেওয়ায় পার্টির একটি অংশ তা মেনে নিতে পারেনি। আর এসব বিবেচনা করেই দলের নেতৃত্ব মানতে অস্বীকার করেছে একটি অংশ।

১৯৯২ সালে গঠিত হওয়ার পর ওয়ার্কার্স পার্টি এই নিয়ে তৃতীয় দফায় ভাঙলো। এরআগে, ১৯৯২ সালে ওয়ার্কার্স পার্টি, ইউনাইডেট কমিউনিস্ট লীগ ও সাম্যবাদী দল (আলী আব্বাস)—এই তিনটি দল নিয়ে গঠিত হয় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। ১৯৯৫ সালে পলিটব্যুরো সদস্য টিপু বিশ্বাস বেরিয়ে নতুন দল করেন গণফ্রন্ট। ২০০৪ সালের ১৪ জুন বেরিয়ে পলিটব্যুরোর আরেক সদস্য সাইফুল হক, বর্তমানে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

রাশেদ খান মেননের অংশটির পক্ষ থেকে অবশ্য নতুন সম্মেলন করার বিষয়ে প্রতিবাদ করা হয়েছে। শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) বিকালে দলটির পলিটব্যুরো সদস্য কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ওয়ার্কার্স পার্টির নাম ব্যবহার করে কথিত জাতীয় সম্মেলন অবৈধ

https://cdn.banglatribune.com/contents/cache/images/800x0x1/uploads/media/2019/11/29/72d0d63f759a921386d600e46d5fd2a4-5de11f3334db2.jpg
যশোরে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ‘মতাদর্শ রক্ষা সমন্বয় কমিটি’র সমাবেশে নেতাকর্মীরা

ওয়ার্কার্স পার্টির নতুন অংশের আত্মপ্রকাশে ঢাকার বামনেতারা

রাশেদ খান মেননের নেতৃত্ব অস্বীকার করে নতুন অংশের উদ্বোধনী সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন ঢাকার কয়েকটি বাম দলের শীর্ষনেতারা। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ ছিলেন—সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশারফ হোসেন নান্নু, ঐক্য ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হারুনার রশিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য কমরেড লিয়াকত আলী।

খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী কামরুল হাসানের ভাই নুরুল হাসানের সভাপতিত্বে সমাবেশে সম্মেলনের উদ্দেশ্য তুলে ধরেন ‘মতাদর্শ রক্ষা সমন্বয় কমিটি’র সমন্বয়ক কমরেড ইকবাল কবির জাহিদ। বক্তব্য রাখেন বিমল বিশ্বাস, মনোজ সাহা প্রমূখ।

ইকবাল কবির বলেন, ‘২০২০ সালে উপমহাদেশে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ পূর্ণ হতে চলেছে। এ সময়ে আমরা দেশের বহুধাবিভক্ত পার্টিগুলোর ঐক্য চাই। লক্ষ্য যখন এক, তখন এক পতাকাতলে আসার সব বাধা আমরা অতিক্রম করার উদ্দেশ্যে গণআন্দোলনের মাধ্যমে ঐক্য অর্জন করবোই—এই সম্মেলনে আমরা সেই প্রত্যয় ঘোষণা করছি।’

সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এই সম্মেলনকে ঐক্যের ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করে ঐক্যের ধারাকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান।

বাম নেতা সাইফুল হক বলেন, ‘২০১৪ সালে ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। ২০১৮ সালে তার চূড়ান্তভাবে দেশবাসী দেখেছে।’

সম্মেলন শুরুর আগে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সঙ্গে জাতীয় সংগীত ও কমিউনিস্ট রাজনীতির আন্তর্জাতিক সংগীত পরিবেশন করা হয়। সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ডেলিগেটসহ পার্টি সদস্যরা কাস্তে-হাতুড়িখচিত লাল পতাকা নিয়ে মিছিল নিয়ে অংশ নেন। এ উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আসাদ, তোজো, শান্তি, মানিক ও ফজলু ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ কমরেড গোলাম মাজেদ স্মরণে পৃথক দুটি তোরণ নির্মাণ করা হয়। শনিবার সম্মেলনের সাংগঠনিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।

যশোরের বাম দলগুলোর নেতারা জানান, ওয়ার্কার্স পার্টির নতুন অংশের সম্মেলনে ঢাকার নেতাদের অংশগ্রহণকে স্থানীয়ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। আগামী দিনে বামধারার রাজনীতিকে আরও ঐক্যবদ্ধ করতে ঢাকার বাম নেতাদের উপস্থিতি এতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলেও তারা আশা প্রকাশ করেন।