বাজেট ঘাটতির মুখে নিউইয়র্ক

by

আমেরিকার নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য বিশ্বের আর্থিক রাজধানী—এ কথা কম বেশ সবারই জানা। একটু পেছনে ফেরা যাক। ১৯৪৬ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত বিশ্বে রাজনীতিবিদরা যখন নতুন জাতিসংঘের সদর দপ্তর কোথায় স্থাপন করবেন তা নিয়ে বিতর্ক করছিলেন, তখন আমেরিকার একটি জায়গা বিশ্বের সম্ভাব্য রাজধানী হিসেবে দাঁড়িয়েছিল। আর সে জায়গাটি ছিল নিউইয়র্ক।
নিউইয়র্ক ১২ মিলিয়ন মানুষ নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম শহর ছিল। একসময় সবচেয়ে ধনী, সবচেয়ে সফল অর্থনীতির বৃহত্তম এবং প্রভাবশালী এই মহানগর বর্তমানে আর সেই অবস্থায় নেই। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের কথা চিন্তা করলে সেই অবস্থা আরও খারাপ বৈকি।
কয়েক মাস আগে নিউইয়র্ক শহরের বাজেট ঘাটতি নিয়ে আমেরিকার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এসব প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রায় ৪০ বছর পর আবারও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে নিউইয়র্ক নগর। অর্থনীতিবিদদের মতে, নিউইয়র্ক নগরের ব্যাংক দেউলিয়া ঘোষণা আর খুব বেশি দিন দূরে নয়।

সর্বশেষ নিউইয়র্ক নগর অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়েছিল মেয়র আব্রাহাম বিমের ক্ষমতায় থাকাকালে। দীর্ঘকালের দেনা বয়ে বেড়ানোর ফলে এখন সেই দেনার পরিমাণ পরিবার প্রতি ৮১ হাজার ১০০ ডলার। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে কর আদায়ের কারণে গণহারে নিউইর্য়কবাসী এই শহর ছেড়ে অন্য অঙ্গরাজ্যে চলে যাচ্ছে। এ কারণে এই নগর ও রাজ্যে অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এর বাইরে মেয়র বিল ডি ব্লাজিও ক্ষমতায় আসার পর থেকে মূল বাজেটের ৩২ শতাংশেরও বেশি ব্যয় অর্থনীতিতে মন্দাভাব সৃষ্টি করে।
নিউইয়র্ক নগরের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কথা তো জানা গেল। কিন্তু গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর বাজেট অফিসের মাধ্যমে ২২ নভেম্বর প্রকাশিত অর্থবছরের অর্ধবার্ষিকী প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে পরের তিন বছরে বাজেট ঘাটতি ৬ বিলিয়ন থেকে ৮ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে হবে।
এই বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না হলে ভবিষ্যতে ঘাটতির পরিমাণ দ্বিগুণ হবে। এর কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে, নিউইয়র্ক স্কুলের বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও মেডিকেইডের পেছনে রাজ্যের অত্যধিক ব্যয়। আম্পায়ার সেন্টার ফর পাবলিক পলিসির প্রতিষ্ঠাতা ই জে ম্যাকমোহন বলেন, ‘মেডিকেডে অতিরিক্ত ব্যয়ের জন্য নিউইয়র্কের রাষ্ট্রীয় বাজেটের ব্যবধান মহামন্দার পর তাদের সর্বোচ্চ স্তরে উঠে গেছে।’
সর্বশেষ ২০১০ সালে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য সবচেয়ে খারাপ আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল। তখন ১০ বিলিয়ন ডলার বাজেটের ঘাটতি দেখা দিয়েছিল।
পাঠকের মনে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগতেই পারে—নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে বাজেটের ঘাটতি হলে আমার কি? ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৬ বিলিয়ন ডলারের বাজেটের ব্যবধানের অর্থ হচ্ছে, স্কুলের নানা কর্মসূচি ও সরকারি পরিষেবাগুলোতে গভীর হ্রাস হতে পারে। মেডিকেইডের সেবা পেতে নিউইয়র্কবাসীর অনেক সমস্যা হতে পারে। নিউইয়র্কের ৬ মিলিয়নের বেশি মানুষ মেডিকেডের সেবা এখন পান—যা নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। বাজেট ঘাটতির কারণে এরাই সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বে।
নিউইয়র্কের সিটিজেন বাজেট কমিশনের সভাপতি অ্যান্ড্রু রেইন বলেন, ‘পুরোপুরি মেডিকেড সিস্টেমের মধ্যেই বাজেট কাটা উচিত নয়।’