সন্দ্বীপ সোসাইটির নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক কাটছেই না

by

সন্দ্বীপ সোসাইটি ইউএসএর নির্বাচন নিয়ে এখনো বিতর্ক চলছে। নানামুখী আলোচনার কারণে কমিউনিটিতে এ নিয়ে বিভ্রান্তিও কম নয়। সদস্যদের মধ্যে দল–মত নির্বিশেষে সম্প্রীতি ও সদ্ভাবের যে দৃষ্টান্ত এত দিন ধরে বজায় রয়েছে, এই বিভ্রান্তি তাতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করেন কমিউনিটির কেউ কেউ।
নির্বাচন কমিশন আর বিজয়ী প্রার্থীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, সন্দ্বীপ সোসাইটির নির্বাচনে বিভ্রান্ত হওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। আর সোসাইটির উপদেষ্টা পরিষদ বলছে,

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী আমিন-সাইফুল পরিষদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ড ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসবে পরিষদ। সোসাইটির উপদেষ্টারা ইতিমধ্যে একাধিক সভা করেছেন। সবশেষ সভা হয়েছে ২৬ নভেম্বর (মঙ্গলবার) রাতে। 

সভা শেষে ফিরোজ আহমেদ উপদেষ্টা প্রথম আলো উত্তর আমেরিকাকে বলেন, ‘আমাদের সবার উদ্দেশ্য একটিই। সোসাইটির স্বার্থ রক্ষা করা। সে কারণে, উপদেষ্টারা তৃতীয়বারের মতো বৈঠক করেছেন। এ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেটি নিরসনে আমরা ত্রিপক্ষীয় সভা করব।’
উপদেষ্টাদের বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। নানা সূত্রে আভাস পাওয়া যাচ্ছে, তাতে উপদেষ্টাদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের বৈঠক আদৌ হবে কিনা, এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, উপদেষ্টাদের কাছে নির্বাচন কমিশনের জবাবদিহি করার বাধ্যবাধকতা সোসাইটির গঠনতন্ত্রে নেই। তা ছাড়া, যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়েছে, সে বিষয়ে জানার জন্য ভোটিং মেশিন ও পদ্ধতি ভাড়া দেওয়া প্রতিষ্ঠান ‘অনেস্ট ব্যালট’–এর সঙ্গে বৈঠক জরুরি। তাদের সংশ্লিষ্টতা ছাড়া নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ভোটের ফলাফলে কোনো জাল-জালিয়াতি সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক হলেও তাতে নিজেদের দাবির পক্ষে যুক্তি দেখানো ছাড়া আর কোনো কাজ থাকবে না বলেও মন্তব্য কারও কারওর।
সোসাইটির প্রবীণ সদস্যদের অনেকের মত, নির্বাচন নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যেভাবে প্রচার চলছে, তাতে করে আগামী নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের যেকোনো ভূমিকা প্রশ্নের মুখে পড়বে। ভোটিং পদ্ধতি নিয়েও কথা উঠবে। এবার, বিতর্ক ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাচন কমিশন জয়ী এবং পরাজিত প্রার্থীদের সমন্বয়ে একটি বহুপক্ষীয় সভা করে একটা ঐকমত্যে পৌঁছানো কঠিন কোনো কাজ ছিল না বলে মনে করেন কেউ কেউ।
একইভাবে, ভোট কেন্দ্রের ভেতর দুজন নির্বাচন কমিশনারের ভূমিকা নিয়েও নানা আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করার পর নির্বাচন কমিশনের একজন সদস্য নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ‘পরাজিত প্রার্থীদের পক্ষ থেকে মিছিল করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে মারধর করার হুমকির পর তাদের সঙ্গে বৈঠক করা, তাদের দাবি শোনার মতো পরিস্থিতি আর থাকে না।’ তিনি স্বীকার করেন, নির্বাচন ব্যবস্থাপনার জন্য যথেষ্ট অভিজ্ঞতা নির্বাচন কমিশনের সব সদস্যের ছিল না।
প্রায় দুই সপ্তাহ আগে নির্বাচন হলেও নানা অভিযোগ আর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য কেন মিলছে না—এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনের ওই সদস্য বলেন, ‘অনেস্ট ব্যালট’ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে চূড়ান্ত ফল না পাওয়া পর্যন্ত ভোট নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়। দুই/তিন দিনের মধ্যে আমরা সেটি পাব এবং আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানতে পারবেন।’
আমিন-সাইফুল পরিষদের দাবি, তাদের ‘ভোট হাইজ্যাক’ হয়েছে। ভোটিং মেশিনে জালিয়াতির মাধ্যমে এ কাজ করেছে নির্বাচন কমিশন। পরিষদের নির্বাচনী কমিটি যুগ্ম সমন্বয়ক ওয়ালিদ ইসলাম বলেন, ‘ভোটিং মেশিন কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কথা জানিয়েছি। নির্বাচনে সবকিছু নিয়ে নির্বাচন কমিশন এমন সব আচরণ করেছে, তাতে আমাদের মনে বিশ্বাস জন্মেছে, নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে।’
ভোট হাইজ্যাক হয়েছে মানতে নারাজ বিজয়ী পান্না-আলাউদ্দিন পরিষদের প্রধান সভাপতি পদে জয়ী আবদুল হান্নান (পান্না)। তিনি বলেন, ‘ভোটের আগে থেকে পরাজিত পক্ষ একটির পর একটি অভিযোগ করে আসছেন। ভোটিং মেশিন নিয়ে যেসব কথা বলা হচ্ছে, আমি আশা করি, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ব্যাখ্যা দেবে। কিন্তু, আমাদের বিজয় নিয়ে, সন্দ্বীপবাসীর সারা দিনের উৎসবের আমেজ নিয়ে, আমাদের প্রতি সবার ভালোবাসা নিয়ে বিভ্রান্তিকর মন্তব্যের আমি মনে জবাব দেওয়া দরকার। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। এখন নানা অজুহাতে, সাধারণ ভোটারদের ইচ্ছের প্রতিফলনকে ‘হাইজ্যাক’ মন্তব্য কোনো পক্ষ থেকে কাম্য নয়। এই ভোটকে কেন্দ্র করে অনেকে দায়িত্বের সীমা ছাড়িয়ে কাজ করেছেন, কথা বলছেন।’