প্রভিশন ঘাটতিতে ১৩ ব্যাংক

♦ সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকিং খাতে নীট ♦ প্রভিশন ঘাটতি আট হাজার ১৩০ কোটি টাকা

by

ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বাড়লেও কমেছে প্রভিশন ঘাটতি। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে শেষে এ খাতে প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে আট হাজার ১২৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আগের প্রান্তিক জুনে যা ছিল ৯ হাজার ২২০ কোটি টাকা। এ সময় ১৩টি ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে। এ তালিকায় রয়েছে বেসরকারি খাতের ৯টি, সরকারি খাতের তিনটি ও বিদেশি খাতের একটি ব্যাংক। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। এতে ওই ব্যাংকের শেয়ারে নিরুৎসাহিত হন বিনিয়োগকারীরা। এ ছাড়া যেসব ব্যাংক প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়, তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার আশঙ্কাও থাকে।

জানা গেছে, ব্যাংকগুলো প্রাহকদের যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে, তার বেশির ভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতকারীদের অর্থ যেন কোনো প্রকার ঝুঁকির মুখে না পড়ে সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। এর একটি হলো প্রভিশন সংরক্ষণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণীকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৬২ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা প্রয়োজনীয়তার বিপরীতে সেপ্টেম্বর শেষে ৫৪ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা প্রভিশন রেখেছে ব্যাংকগুলো। এতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে আট হাজার ১২৯ কোটি টাকা। তবে জুন মাসের তুলনায় এক হাজার ৯০ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি কমেছে সেপ্টেম্বরে। চলতি বছরের জুন শেষে মোট প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ১১৯ কোটি টাকা।

এ সময় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন খাতের ব্যাংকগুলোতে ছয় হাজার ৪৩৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আর বেসরকারি খাতের ব্যাংকে প্রভিশন ঘাটতি দুই হাজার ১৪৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। তবে এ সময়ে বিদেশি খাতের ব্যাংকে ১৫ কোটি ও বিশেষায়িত ব্যাংকে ৩০২ কোটি ৯৬ লাখ টাকার প্রভিশন উদ্বৃত্ত রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে এক লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ১১.৯৯ শতাংশ। তিন মাস আগে (জুন শেষে) মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে তিন হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, একসময় কোনো ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি থাকলে শুধু সতর্ক ও ঘাটতি মেটাতে দিকনির্দেশনা দিত কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সংশোধিত ব্যাংক কম্পানি আইনে কোনো ব্যাংকে টানা দুই বছর ঘাটতি থাকলে তার বড় অঙ্কের জরিমানাসহ লাইসেন্স বাতিলের কথা বলা হয়েছে। এসব কারণে নানা উপায়ে প্রভিশন ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করে ব্যাংকগুলো।